বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই ফেনীতে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে নদীভাঙন। প্রতিদিনই বিলীন হচ্ছে বসতঘর, ভিটেমাটি।
নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে অসহায় হয়ে এ দৃশ্য দেখছেন ঘরহারা মানুষ।
প্রতিবছরই এ নদীভাঙনে ঘরবাড়ি হারান শত শত মানুষ। ১৯৬৫-৬৭ সালের মধ্যে ভাঙন ঠেকাতে সোনাগাজীর কাজিরহাট এলাকায় ছোট ফেনী নদীর ওপর নির্মাণ করা হয় ২১ ভেন্টের একটি রেগুলেটর। এতে কিছুটা স্বস্তি মিললেও ২০০৫ সালে রেগুলেটরটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে ফের শুরু হয় তীব্র ভাঙন।
তৎকালীন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে পানি সম্পদ মন্ত্রীকে জানিয়ে মুছাপুরে একটি নতুন স্লুইস গেট নির্মাণের প্রস্তাব দেন।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ওই প্রস্তাবের ভিত্তিতে কাজিরহাট রেগুলেটর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার পেছনে, নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মুছাপুরে ২৩ ভেন্টের একটি ক্লোজার নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয়। এতে ফেনী, নোয়াখালী ও কুমিল্লার অন্তত ১১টি উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা নদীভাঙন ও লবণাক্ত জোয়ারের পানি থেকে রক্ষা পায়। তৈরি হয় পানি নিষ্কাশনের কার্যকর ব্যবস্থা।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হয় ৩২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। তবে ২০০৬ সালে সরকার পরিবর্তনের পর প্রকল্পের অগ্রগতি শ্লথ হয়ে পড়ে।
এই সময়ে মুছাপুর, চরহাজারী, চর এলাহী, চরপার্বতী ও চরদরবেশসহ বিভিন্ন এলাকার প্রায় দুই হাজার বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।
২০০৮ সালে প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা থাকলেও বাজেট বৃদ্ধি করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২০০৯ সালে কাজ শেষ করে। এছাড়া, নদীভাঙন রোধে ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে মুছাপুর রেগুলেটর-সংলগ্ন ক্লোজার ড্যাম নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর খামখেয়ালি ও উদাসীনতার কারণে ড্যাম নির্মাণ বারবার ব্যর্থ হয়।
২০১৫ সালে ড্যামটির নির্মাণকাজ শেষ হলে ওই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে ফিরে আসে স্বস্তি। কৃষিতে আসে বিপ্লব। ধান, গম, আলু, মরিচ, সরিষা, তরমুজসহ বিভিন্ন ফসলের বাম্পার ফলন হতে থাকে।
ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, মাছের হ্যাচারি, গরু-মুরগির খামার। তৈরি হয় কর্মসংস্থান। উন্নত হয় যোগাযোগ ব্যবস্থা। গড়ে ওঠে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
একসময় মুছাপুর ক্লোজার হয়ে ওঠে পর্যটকদের পছন্দের স্থান। ম্যানগ্রোভ বন, জলরাশি আর প্রশান্ত পরিবেশে ভ্রমণপিপাসুরা ছুটে আসতেন সারা বছর। গড়ে ওঠে রেস্টুরেন্টসহ নানা ব্যবসা।
কিন্তু সেই স্বপ্নের মুছাপুর এখন অস্তিত্ব সংকটে।
২০২৪ সালের ২৬ আগস্ট ভারত থেকে আসা বন্যার পানির তীব্র চাপে, নির্মাণ ত্রুটি ও স্থানীয় বালুখোরদের দুর্নীতির কারণে ক্লোজারটি ধসে পড়ে। তলিয়ে যায় হাজারো মানুষের স্বপ্ন।
ভাঙন অব্যাহত থাকায় কোম্পানীগঞ্জসহ আশপাশের শত শত বসতঘর নদীগর্ভে চলে গেছে। নদীতে তলিয়ে গেছে বন বিভাগের দোতলা ভবনটিও।
সোনাগাজীর সাহেবের ঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে ব্রিজটি। ভাঙন অব্যাহত থাকলে ব্রিজটিও যেকোনো সময় নদীতে ধসে পড়তে পারে।
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মুছাপুরের বাংলা বাজারের একটি বড় রাস্তা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
পাউবোর পক্ষ থেকে জিও ব্যাগ ফেলার কাজ চললেও তা যথেষ্ট নয় বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
সোনাগাজীর মোল্লাপাড়ায় গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে ৫০টির বেশি ঘর নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। নদীর পাড় ঘেঁষে থাকা বাসিন্দারা রয়েছে উৎকণ্ঠায়।
স্থানীয় সাবেক চেয়ারম্যান সামছুদ্দিন খোকন জানান, ক্লোজার ধসে পড়ার পর থেকে মুছাপুর ইউনিয়নের দুই শতাধিক পরিবার এবং চর এলাহী, চর ফকিরা ও চর পার্বতীর তিন শতাধিক পরিবার বসতভিটা হারিয়ে গৃহহীন হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ড নোয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী হালিম সালেহী জানান, মুছাপুরে ক্লোজার পুনঃনির্মাণের বিষয়ে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের একটি সমীক্ষা চলছে। প্রায় ৭০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, জুনের মধ্যে প্রতিবেদন পাওয়া যাবে। এরপর তা একনেক সভায় পাঠানো হবে। অনুমোদন পেলে নির্মাণকাজ শুরু হবে। তবে তা সহসা নয়। এজন্য তিনি জনসাধারণকে ধৈর্য ধরার অনুরোধ জানান।
ফেনী ও নোয়াখালীর মানুষের প্রাণের দাবি—প্রতিবছরের দুর্যোগের মুখে না পড়ে, অতিদ্রুত মুছাপুর স্লুইস গেট পুনর্নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হোক। তা না হলে আসন্ন বর্ষায় ২০২৪ সালের বন্যার চেয়েও ভয়াবহ পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে উপকূলবাসীর জন্য।
ফজর | ০৪:৫৪-০৬:০৮ মিনিট ভোর |
---|---|
যোহর | ১২:০৯-০৪:২৫ মিনিট দুপুর |
আছর | ০৪:২৬-০৬:০৬ মিনিট বিকাল |
মাগরিব | ০৬:১০-০৭:২১ মিনিট সন্ধ্যা |
এশা | ০৭:২২-০৮:৪৯ মিনিট রাত |
জুম্মা | ১.৩০ মিনিট দুপুর |