ডেস্ক নিউজ:
বারাক ওবামা প্রশাসনের সাবেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের গাজা নীতির কড়া সমালোচনা করেছেন। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত জনপ্রিয় পররাষ্ট্রনীতি পডকাস্ট ‘পড সেভ দ্য ওয়ার্ল্ড’-এ দেয়া মন্তব্যগুলো সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
পডকাস্টটির সহ-আয়োজক বেন রোডস এবং টমি ভিয়েটর—যারা দুজনেই ওবামা প্রশাসনের শীর্ষ পদে ছিলেন—গাজা পরিস্থিতি নিয়ে বাইডেন প্রশাসনের অবস্থানকে তীব্র ভাষায় নিন্দা করেন। ওবামা সরকারের উপ-জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা রোডস বলেন, ‘ইসরাইল যুদ্ধ শেষ করতে চায় না। যদি তারা ইচ্ছুক হতো, তাহলে বন্দীদের মুক্তির ব্যবস্থা করে দিত। গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে তাদের যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার যে দাবি, তার কোনো বাস্তব নিরাপত্তাজনিত প্রয়োজন নেই। এখানে আপনি মানসিকভাবে বিধ্বস্ত, আহত, তাঁবুতে বোমা খাওয়া, খাদ্য ও ওষুধবিহীন মানুষদের কথা বলছেন।’
পডকাস্টে জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সাবেক মুখপাত্র ভিয়েটর বলেন, ‘গাজা সম্পর্কে বাইডেন প্রশাসনের নীতি কতই না লজ্জাজনক ছিল। নেতানিয়াহুর প্রতি আনুগত্য তাকে হত্যাকাণ্ড, নীতির সম্পূর্ণ অনৈতিকতা এবং সেই নীতিতে মার্কিন প্রশাসনের জড়িত থাকার প্রতি অন্ধ করে দিয়েছে।’
এই মন্তব্যগুলো সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। অনেক অ্যাক্টিভিস্ট ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন, সাবেক কর্মকর্তারা সবসময় ‘ইহুদিদের পক্ষ নিয়েছেন’, এখন যখন অনেক দেরি হয়ে গেছে, তখন তারা মুখ খুলছেন। কেউ কেউ জোর দিয়ে বলেন, এই কথাগুলো বহু মানুষ আগেই বলে আসছেন-ইসরাইল কেন যুদ্ধ বন্ধ করতে চায় না, সেই ‘আসল কারণ’ নিয়েই আলোচনা শুরু হয়েছে।
ইতোমধ্যে গাজা যুদ্ধের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট আরো ঘনীভূত হয়েছে। জানুয়ারির শুরুতে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ঘোষণা দেন যে যুদ্ধ চলবে। এই অবস্থান অনেকটা বাধ্যতামূলকভাবে গ্রহণ করেছিলেন, যাতে তার জোটসঙ্গী, অতি-ডানপন্থী অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ বিদ্রোহ না করেন। যুদ্ধ শেষ হলে নেতানিয়াহু একদিকে ভোটারদের ক্ষোভ, অন্যদিকে দুর্নীতির মামলার মুখোমুখি হতেন।
ফেব্রুয়ারিতে ইসরাইল একতরফাভাবে যুদ্ধবিরতি ভেঙে দেয় এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে যাওয়া থেকে বিরত থাকে। যেখানে সকল বন্দীর মুক্তির সম্ভাবনা ছিল। নেতানিয়াহু একাধিকবার হামাসের মুক্তির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন।
অনেক পর্যবেক্ষকের মতে, যদি নেতানিয়াহু সত্যিই বন্দীদের মুক্তিকে অগ্রাধিকার দিতেন, তাহলে অনেক আগেই একটি চুক্তি সম্ভব হতো। কিন্তু চুক্তি মানে হতো যুদ্ধের ইতি। আর সেটি নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক অস্তিত্বের জন্য হুমকি।
বর্তমানে যুদ্ধবিরতির প্রশ্নটি একটি জটিল রাজনৈতিক অবস্থায় দাঁড়িয়েছে। প্রথমে যেখানে এটি ছিল বন্দী মুক্তির বিষয়ে কেন্দ্রীভূত, এখন তা রূপ নিয়েছে—গাজা উপত্যকা কে পরিচালনা করবে, সেই বিতর্কে।
ইসরাইলের চ্যানেল ১৩ সম্প্রচারিত একটি তদন্ত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, বাইডেন প্রশাসন ইচ্ছাকৃতভাবে গাজায় ইসরাইলের সামরিক অভিযানকে কৌশলগত উদ্দেশ্যের বাইরেও চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ঊর্ধ্বতন মার্কিন কর্মকর্তারা ব্যক্তিগতভাবে স্বীকার করেছেন যে এই অভিযান এখন “হত্যা ও ধ্বংসের জন্য হত্যা ও ধ্বংস”-এ রূপ নিয়েছে।
তদন্ত আরো দাবি করে, যুক্তরাষ্ট্র কূটনৈতিক অস্পষ্টতা, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং শান্তি প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করার সাথে জড়িত ছিল।
এই ঘটনাগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে বাইডেন প্রশাসনের গাজা নীতির নৈতিকতা ও কৌশল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। সাবেক কর্মকর্তাদের বক্তব্য যেন সেই সমালোচনার আরও একটি উচ্চস্তরের প্রতিফলন।
সূত্র : মিডল ইস্ট আই
ফজর | ০৪:৫৪-০৬:০৮ মিনিট ভোর |
---|---|
যোহর | ১২:০৯-০৪:২৫ মিনিট দুপুর |
আছর | ০৪:২৬-০৬:০৬ মিনিট বিকাল |
মাগরিব | ০৬:১০-০৭:২১ মিনিট সন্ধ্যা |
এশা | ০৭:২২-০৮:৪৯ মিনিট রাত |
জুম্মা | ১.৩০ মিনিট দুপুর |