| ০৭ জুন ২০২৫

ট্রাম্পের পারস্পরিক শুল্ক আরোপ: বিশ্বব্যাপী বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থা হুমকির মুখে

  • আপডেট টাইম : 30-04-2025 ইং
  • 45227 বার পঠিত
ট্রাম্পের পারস্পরিক শুল্ক আরোপ: বিশ্বব্যাপী বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থা হুমকির মুখে
ছবির ক্যাপশন: ট্রাম্পের পারস্পরিক শুল্ক আরোপ: বিশ্বব্যাপী বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থা হুমকির মুখে

ডেস্ক নিউজ: 

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকান শিল্প ক্ষেত্রকে পুনরুজ্জীবিত করতে, বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা হ্রাস করতে এবং দেশীয় কর্মসংস্থান রক্ষার জন্য গত ২ এপ্রিল একটি নতুন ‘পারস্পরিক শুল্ক’ নীতি ঘোষণা করেন। এই নীতিমালায় দ্বি-স্তরীয় শুল্ক কাঠামো চালু করা হয়েছে- ৫ এপ্রিল থেকে কার্যকর সকল আমদানির উপর সর্বজনীন ১০ শতাংশ শুল্ক। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে উল্লেখযোগ্য বাণিজ্য উদ্বৃত্ত রয়েছে এমন দেশগুলোকে লক্ষ্য করে নির্দিষ্ট ‘পারস্পরিক শুল্ক’ আরোপ করা হয়েছে যা ৯ এপ্রিল, ২০২৫ থেকে কার্যকর হয়ার কথা ছিল। চীন ব্যতীত এই পারস্পরিক শুল্ক বাস্তবায়ন পরবর্তীতে ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করা হয়।

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক শৃঙ্খলের উপর আঘাত    

প্রেসিডেন্ট  ট্রাম্পের ‘আমেরিকা প্রথম’ বাণিজ্য নীতি বিশ্ব অর্থনীতিকে নাড়া দিয়েছে এবং বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে দাঁড় করিয়েছে। এটি বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য শৃঙ্খলাকে ব্যাপক অনিশ্চয়তার মুখে দাঁড় করিয়েছে। এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক সরবরাহ শৃঙ্খল, আন্তঃসীমান্ত বিনিয়োগ প্রবাহ এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে গুরুতর হুমকি তৈরি করেছে। ব্যবসা এবং বিনিয়োগকারীরা ক্রমবর্ধমান অস্থির এবং অপ্রত্যাশিত বাণিজ্য পরিবেশ দেখে অনিশ্চয়তায় ভুগছেন। যার ফলে বাজারের অস্থিরতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অনেক দেশ মার্কিন শুল্ক আরোপকে অযৌক্তিক এবং ক্ষতিকারক বলে মনে করে। উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক প্রভাবের কথা উল্লেখ করে তারা জানাচ্ছে যে, এই ধরনের একতরফা পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ভারসাম্যকে অস্থিতিশীল করে দিতে পারে। এই নীতি বিশ্বব্যাপী ব্যবস্থার আন্তঃসম্পৃক্ততা এবং দীর্ঘমেয়াদী বহুপাক্ষিক স্থিতিশীলতার চেয়ে স্বল্পমেয়াদী জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দয়ার স্পষ্ট উদাহরণ বলে মনে করেন তারা।

এই পারস্পরিক শুল্ক আরোপের বিষয়টি সম্ভাব্য বৈশ্বিক বাণিজ্য যুদ্ধ সম্পর্কে উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে। যার সুদূরপ্রসারী প্রভাব সরবরাহ শৃঙ্খল, বিনিয়োগ প্রবাহ এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার উপর পড়বে। সেইসঙ্গে বিশ্ব অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য ব্যবস্থায় অনিশ্চয়তাকে আরও বাড়িয়ে তুলবে।বিভিন্ন দেশ এই চ্যালেঞ্জের প্রতি ভিন্ন ভিন্নভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। কিছু দেশ কূটনৈতিক যোগাযোগ এবং আলোচনার পথ বেছে নিয়েছে, আবার অন্যরা তাদের অর্থনীতি রক্ষার জন্য পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বর্ধিত শুল্কের প্রতিশোধ হিসেবে চীন মার্কিন পণ্যের উপর ১২৫ শতাংশ পর্যন্ত প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপ করেছে। চীনের প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপের কারণেই যুক্তরাষ্ট্র চীনা আমদানির উপর মোট ২৪৫ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার মূল্যের শুল্ক আরোপ করে বোরবন এবং মোটরসাইকেলের মতো বিখ্যাত আমেরিকান রপ্তানিকে লক্ষ্যবস্তু করেছে। একইভাবে, কানাডা এবং মেক্সিকো মার্কিন ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম এবং কৃষি পণ্যের উপর শুল্ক আরোপ করেছে। এই পদক্ষেপগুলো বাণিজ্য উত্তেজনা বাড়িয়েছে এবং বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খলকে ব্যাহত করেছে।

বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা  

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসাত্মক প্রভাব এবং ১৯৩০ সালের স্মুট-হাওলি ট্যারিফ আইনের ফলে সৃষ্ট তীব্র অর্থনৈতিক মন্দার ফলে যুক্তরাষ্ট্র মুক্ত বাণিজ্য, অর্থনৈতিক একীকরণ এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মূল্য উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছিল। এটি যুক্তরাষ্ট্রকে বাণিজ্য উদারীকরণে অনুপ্রাণিত করে এবং নিয়ম-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য একটি আইনি কাঠামো প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরে। ১৯৪৭ সালে জেনারেল এগ্রিমেন্ট অন ট্যারিফস অ্যান্ড ট্রেড (GATT) প্রতিষ্ঠায় যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, আধুনিক বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থার ভিত্তি স্থাপন করে এবং পরবর্তীতে ১৯৯৫ সালে পরিষেবা, ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি এবং বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য বাণিজ্য নিয়ম সম্প্রসারণের জন্য বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (WTO) গঠনে নেতৃত্ব দেয়।এই প্রতিষ্ঠানগুলো বাধা হ্রাস করে ন্যায্য বাণিজ্য অনুশীলন নিশ্চিত করে মুক্ত বাণিজ্যকে উৎসাহিত করে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্র ধারাবাহিকভাবে বাণিজ্য উদারীকরণ, বিশ্বায়ন, পণ্য, পরিষেবা এবং মূলধনের অবাধ চলাচলের পক্ষে ছিল। প্রেসিডেন্ট  ট্রুম্যান GATT প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন, যখন প্রেসিডেন্ট কেনেডি উল্লেখযোগ্য শুল্ক হ্রাসের প্রস্তাব করেছিলেন।রোনাল্ড রিগ্যান আবার উরুগুয়ে রাউন্ডকে সমর্থন করেছিলেন, যার ফলে WTO তৈরি হয় এবং  রিগ্যান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতে (NAFTA-) স্বাক্ষর করেছিলেন। বিল ক্লিনটন বিশ্বায়নের প্রচারণার মাধ্যমে NAFTA এবং WTO প্রতিষ্ঠার নেতৃত্ব দেন। জর্জ ডব্লিউ বুশ চিলি, সিঙ্গাপুর এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোর সাথে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি আরও সম্প্রসারিত করেন এবং একই সাথে WTO আলোচনার দোহা রাউন্ডকে সমর্থন করেন। যুক্তরাষ্ট্রের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা এবং এশিয়ায় তার অনেক মিত্র বাণিজ্য উদারীকরণ এবং বিশ্বায়নকে গ্রহণ করে।

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ভিত্তিপ্রস্তর হিসেবে এমএফএন

বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থার সবচেয়ে মৌলিক নীতিগুলোর মধ্যে একটি হল বৈষম্যহীনতা, যা মোস্ট ফেওয়ার্ড নেশন ( MFN)  নিয়মে অন্তর্ভুক্ত। এমএফএন নিয়মের অধীনে ডব্লিউটিও সদস্য দেশগুলোকে সমস্ত বাণিজ্য অংশীদারদের সাথে সমান আচরণ করতে হবে। এর অর্থ হল, যদি কোনও দেশ কোনও বাণিজ্য অংশীদারকে শুল্ক কমায় বা বাণিজ্য ছাড় দেয়, তবে তাকে অবশ্যই অন্যান্য সমস্ত WTO সদস্যদের জন্য একই শর্তাবলী প্রয়োগ করতে হবে। এমএফএন ধারণার উৎপত্তি অনেক আগেই হয়েছিল। তবে বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যে ন্যায্যতা এবং উন্মুক্ততা প্রচারের জন্য আধুনিক বাণিজ্য চুক্তিতে এটিকে আনুষ্ঠানিক রূপ দেয়া হয়। এমএফএন নীতিটি জিএটিটি এবং পরবর্তীতে ডব্লিউটিওর একটি মৌলিক উপাদান হয়ে ওঠে, যা বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য কাঠামোর ভিত্তিপ্রস্তর হিসেবে কাজ করে।

পারস্পরিক শুল্ক বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়ম লঙ্ঘন করে

যুক্তরাষ্ট্রের পারস্পরিক শুল্ক নীতি, যা বহুপাক্ষিক সহযোগিতার চেয়ে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য আলোচনাকে অগ্রাধিকার দেয় এবং বিভিন্ন দেশের উপর পৃথক শুল্ক আরোপ করে, তা সরাসরি WTO-এর নিয়ম ও নীতির বিরোধিতা করে। সেইসঙ্গে বৈষম্যহীনতা এবং পারস্পরিক মূল্যবোধের ধারণাকে ক্ষুণ্ন করে। পারস্পরিক শুল্ক নীতিটি এমএফএন নীতি লঙ্ঘন করেছে, যা সদস্য দেশগুলোকে অভিন্ন শুল্ক হার প্রয়োগের মাধ্যমে সমস্ত বাণিজ্য অংশীদারদের সাথে সমান আচরণ করতে বাধ্য করে। পারস্পরিক শুল্ক ব্যবস্থা একটি বৈষম্যমূলক কাঠামো তৈরি করে  MFN নীতির লঙ্ঘন করেছে। অধিকন্তু, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সদস্যরা বিশ্ব বাণিজ্যে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য সম্মতিক্রমে তাদের শুল্ক আরোপ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই প্রতিশ্রুতির বাইরে একতরফাভাবে শুল্ক আরোপ করলে তা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়মকে লঙ্ঘন করে।  বহুপাক্ষিক ব্যবস্থাকে দুর্বল করে।

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার বিরোধ নিষ্পত্তির প্রক্রিয়াগুলোকে  উপেক্ষা করা 

ভর্তুকি, আমদানি কোটা এবং নিয়ন্ত্রক বাধা বাস্তবায়নের জন্য যুক্তরাষ্ট্র প্রায়শই চীনের মতো দেশগুলোর সমালোচনা করে আসছে ।

যদিও এই উদ্বেগগুলোর কিছুটা বৈধতা রয়েছে , তবুও এগুলো ট্রাম্পের পারস্পরিক শুল্ক নীতির মতো একতরফা পদক্ষেপকে সমর্থন করে না। এই ধরনের বিরোধগুলো WTO-এর বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থা (DSM) এর মাধ্যমে সমাধান করা যেতে পারে, যা বাণিজ্য দ্বন্দ্ব সমাধানের জন্য একটি নিয়ম-ভিত্তিক পদ্ধতি। WTO-এর DSM বিশেষভাবে সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য বিরোধগুলো ন্যায্য ও স্বচ্ছভাবে পরিচালনা করার জন্য তৈরি করা হয়েছে। এটি দেশগুলোকে পরামর্শ, পর্যালোচনা এবং প্রয়োজনে আপিলের মাধ্যমে WTO চুক্তি লঙ্ঘনকারী বাণিজ্য অনুশীলনগুলোকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম প্রদান করে। এই প্রক্রিয়াটি প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিয়মের ভিত্তিতে বিরোধ নিষ্পত্তি করে, প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করেই অ-শুল্ক বাধার মতো সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য একটি নিরপেক্ষ এবং কার্যকর প্রক্রিয়া প্রদান করে।

ক্ষুদ্র ও উন্নয়নশীল অর্থনীতিতে ধাক্কা 

বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থাকে অস্থিতিশীল করার পাশাপাশি, ট্রাম্পের পারস্পরিক শুল্ক উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলোকে আরও তীব্র করে তোলে। এই দেশগুলোকে WTO-এর মতো বহুপাক্ষিক কাঠামো দ্বারা কিছু সুরক্ষা দেয়া হয়, যার মধ্যে রয়েছে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (LDC) জন্য বিশেষ বিধান এবং বিরোধ নিষ্পত্তির সুযোগ। দ্বিপাক্ষিক পরিবেশে এই সুরক্ষা ব্যবস্থাগুলো সাধারণত অনুপস্থিত থাকে। যার ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলো শোষণ এবং জবরদস্তিমূলক শুল্কের মুখে পড়ে। উন্নয়নশীল দেশগুলো পণ্য রপ্তানি এবং বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য স্থিতিশীল বাণিজ্য সম্পর্ক এবং বিশ্ব বাজারে প্রবেশাধিকারের উপর নির্ভর করে। তবে, ট্রাম্পের পারস্পরিক শুল্ক এই দেশগুলোর জন্য অনিশ্চয়তা এবং সীমিত বাজারে প্রবেশাধিকার তৈরি করেছে।উদাহরণস্বরূপ, মাদাগাস্কার এবং লেসোথো, দুটি ছোট এবং স্বল্পোন্নত দেশ, যথাক্রমে ৪৭ শতাংশ এবং ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্কের সম্মুখীন হয়েছে, যদিও মার্কিন বাণিজ্য ঘাটতিতে ০.১ শতাংশেরও কম অবদান রেখেছে। একইভাবে বাংলাদেশ যা মার্কিন বাণিজ্য ঘাটতির ক্ষেত্রেও খুব কম অবদান রাখে, তার উপর ৩৭ শতাংশের অসামঞ্জস্যপূর্ণ উচ্চ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রে তার পোশাকের প্রতিযোগিতামূলক বাজারকে উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করে - যা তার রপ্তানির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্য। উন্নয়নশীল দেশগুলো প্রায়শই দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় গুরুতর অসুবিধার সম্মুখীন হয় কারণ তাদের সীমিত দর কষাকষি ক্ষমতার কারণে। এটি তাদের বাণিজ্য শর্তাবলীর উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এই দেশগুলোর অর্থনীতি সাধারণত ছোট মাপের, কম বৈচিত্র্যপূর্ণ। সেইসঙ্গে  মূল রপ্তানির উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। যুক্তরাষ্ট্রের মতো বৃহত্তর এবং উন্নত অর্থনীতির সাথে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায়, তাদের অনুকূল শর্ত দাবি করার জন্য অর্থনৈতিক সুবিধার অভাব রয়েছে।  

বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থাকে দুর্বল করে তোলে 

ট্রাম্পের পারস্পরিক শুল্ক নীতি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির পর থেকে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সম্পর্কের ভিত্তি স্থাপনকারী নিয়ম-ভিত্তিক, বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থা থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে বিচ্যুতিকে চিহ্নিত করে। ব্যাপক শুল্ক আরোপ করে এবং বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতায় ইন্ধন জুগিয়ে  ট্রাম্পের নীতি সহযোগিতা, বৈষম্যহীনতা এবং WTO দ্বারা প্রতিষ্ঠিত নিয়মগুলোকে ক্ষুণ্ন করে।ন্যায্যতা ও সহযোগিতার নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থা দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ভিত্তিপ্রস্তর হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য অস্থিতিশীল হবার ঝুঁকি, বিশ্বায়ন সীমিত করা, বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য যুদ্ধ বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক মন্দার তাৎক্ষণিক উদ্বেগ ছিল। তবুও এর বৃহত্তর এবং আরও উদ্বেগজনক পরিণতি হল বহুপাক্ষিক বাণিজ্য কাঠামোর ধীরে ধীরে অবক্ষয়। এই ধরনের পরিবর্তনের প্রভাব বাণিজ্যের বাইরেও অনেক বেশি বিস্তৃত। এমনকি এটি বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক শৃঙ্খলাকে অস্থিতিশীল করার ঝুঁকিও তৈরি করে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) মতো বহুপাক্ষিক প্রতিষ্ঠানের উপর আস্থার ক্ষয় অন্যান্য সংস্থাগুলিতেও ছড়িয়ে পড়তে পারে, যা জাতিসংঘের মতো সংস্থাগুলোর  বিশ্বাসযোগ্যতা, বৈধতা এবং কার্যকারিতাকে ক্ষুণ্ন করে।


সূত্র : দ্য ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস


লেখক গোলাম রসুল ঢাকার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজির  (আইইউবিএটি) অর্থনীতি বিভাগের  পিএইচডি অধ্যাপক

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
নামাজের সময়সূচী
জাতীয় সঙ্গীত
©সকল কিছুর স্বত্বাধিকারঃ Gen Z Bangladesh Online - জেন জি বাংলাদেশ অনলাইন | আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ