সামাজিক সুরক্ষায় যুক্ত হচ্ছে আরও ৬ লাখ ২৪ হাজার উপকারভোগী
ডেস্ক নিউজ:
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে নতুনভাবে যুক্ত হচ্ছে আরও ৬ লাখ ২৪ হাজার সুবিধাভোগী। একই সঙ্গে আসন্ন বাজেটে সব ধরনের ভাতা সর্বনিম্ন ৫০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ একশ টাকা বাড়িয়ে ৬৫০ থেকে ৯০০ টাকায় উন্নীত করা হচ্ছে। সম্প্রতি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিসংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে উল্লিখিত এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দীন আহমেদ এসব প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছেন। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানিয়েছে, আগামী বাজেটে ১২ ধরনের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে মোট বরাদ্দ থাকছে ১৯ হাজার ৭০৭ কোটি টাকা। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বরাদ্দ আছে ১৭ হাজার ৯৫৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে নতুন অর্থবছরে এক হাজার ৭৫০ কোটি টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সূত্র মতে, আসন্ন বাজেটে নতুন করে যুক্ত করে ৬ লাখ ২৪ হাজার জনকে বিভিন্ন ভাতার আওতায় আনা হচ্ছে। এটি চলতি অর্থবছরের তুলনায় কম। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিভিন্ন ভাতার আওতায় নতুন করে আনা হয়েছে ১০ লাখ ২৬ হাজার জন সুবিধাভোগী। ফলে ওই হিসাবে চলতি অর্থবছরের তুলনায় আগামী অর্থবছরে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বেষ্টনীতে নতুন সুবিধাভোগী মানুষের সংখ্যা কমানো হচ্ছে।
অর্থ বিভাগের হিসাবে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে নতুন করে ৯৯ হাজার জনকে যুক্ত করে আগামী বাজেটে ৬১ লাখ বৃদ্ধকে বয়স্ক ভাতা দেওয়া হবে। এ কর্মসূচিতে ভাতার অঙ্ক ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৬০০ টাকার স্থলে ৬৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে বরাদ্দ থাকছে চার হাজার ৭৯১ কোটি ৩১ লাখ টাকা। চলতি বাজেটে বরাদ্দ আছে চার হাজার ৩৫০ কোটি ৯৭ লাখ টাকা।
এদিকে, বিধবা ভাতাভোগী ক্যাটাগরিতে নতুন মুখ যুক্ত হচ্ছে এক লাখ ২৫ হাজার জন। এই কর্মসূচিতে মোট উপকারভোগীর সংখ্যা ২৭ লাখ ৭৫ হাজার জন থেকে বেড়ে ২৯ লাখে উন্নীত হচ্ছে। এই খাতে অর্থ বরাদ্দ থাকছে ২ হাজার ২৭৭ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। চলতি বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ আছে এক হাজার ৮৪৪ কোটি ৩২ লাখ টাকা। তবে ভাতার অঙ্ক একশ টাকা বাড়িয়ে ৬৫০ টাকা করা হচ্ছে।
প্রতিবন্ধী ভাতার কার্যক্রমও বাড়ছে। উপকারভোগী ৩২ লাখ ৩৪ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৩৪ লাখ ৫০ হাজারে উন্নীত করা হচ্ছে। ভাতার অঙ্ক ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৯০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ কার্যক্রম পরিচালনা করতে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে তিন হাজার ৭৫২ কোটি টাকা, চলতি অর্থবছরে এ খাতে তিন হাজার ৩২১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা আছে।
সূত্রমতে, মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচির মাধ্যমে সমাজে দরিদ্র মাকে ভাতা দেওয়া হয়। আগামী অর্থবছরে এ কর্মসূচিতে এক লাখ ১৫ হাজার ৯২০ জনকে নতুন করে যুক্ত করা হবে। এতে মোট উপকারভোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ১৭ লাখ ৭১ হাজার ২০০ জন। তাদের ভাতার অঙ্ক ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৮৫০ টাকায় উন্নীত হয়েছে।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ সিপিডির এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে ৩৩ লাখ বয়স্ক ও ২৫ লাখ বিধবা যোগ্যতা থাকা সত্ত্বে ভাতা পাচ্ছেন না। অন্যদিকে, প্রায় ৩০ শতাংশ বয়স্ক ও ৩৩ শতাংশ বিধবা ভাতা পাওয়ার অনুপযোগী হওয়া সত্ত্বে নিয়মিত ভাতা পাচ্ছেন। এতে করে তাদের পেছনে বছরে দেড় হাজার কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। এ টাকা দিয়ে প্রায় ১৫ লাখ বয়স্ক ও বিধবাকে ভাতার আওতায় আনা সম্ভব।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসেব অনুযায়ী, দেশের ১৬ কোটি ৯৮ লাখ মানুষের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ বা প্রায় তিন কোটি ১৭ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নীচে বাস করেন। নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির অংশগ্রহণের ক্ষেত্রেও শহর ও গ্রামের মধ্যে বড় পার্থক্যের কথা জানা গেছে। শহরের দরিদ্রদের মাত্র ৫০ শতাংশ এ কর্মসূচির আওতাভুক্ত আছেন। অন্যদিকে, গ্রামের ক্ষেত্রে এ হার ১৫০ শতাংশ।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তায় মোট এক লাখ ২৬ হাজার ২৭২ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। বয়স্ক, বিধবা, পেনশনভোগী, মুক্তিযোদ্ধা, বেদে, হিজড়াসহ বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর এক কোটি ৩৮ লাখ ৬৪ হাজার ব্যক্তিকে নগদ ভাতা দিতে বরাদ্দ রয়েছে ৪৩ হাজার ৩৮৯ কোটি টাকা।
এর মধ্যে আট লাখ নন-ক্যাডার সরকারি কর্মচারী পেনশনভোগীদের জন্য বরাদ্দ ২৭ হাজার ৪১৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ, মাত্র ৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ উপকারভোগী এ খাতে মোট বরাদ্দের ৬৩ দশমিক ১৮ শতাংশ পাচ্ছেন।
এছাড়া দুই লাখ ১৯ হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধার ভাতা হিসেবে পাঁচ হাজার ১৭৬ কোটি ৭১ লাখ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। অর্থাৎ, নগদ বিতরণ খাতের ১ দশমিক ৫৮ শতাংশ উপকারভোগী এ খাতে বরাদ্দের ১১ দশমিক ৯৩ শতাংশ অর্থ পাচ্ছেন।
বার্ধক্য ভাতা, বিধবা ভাতা, মা ও শিশু সুবিধা কর্মসূচি, প্রতিবন্ধী, হিজড়া ও বেদে সম্প্রদায়ের জন্য সহায়তাসহ বিভিন্ন কর্মসূচির জন্য উপকারভোগী বাছাইয়ে সম্পৃক্ত থাকেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বার ও পৌরসভার মেয়র ও ওয়ার্ড কাউন্সিলররা। এ কর্মসূচির আওতায় মোট সুবিধাভোগীর সংখ্যা এক কোটি ২৪ লাখ ৪৫ হাজার জন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন জানিয়েছেন, আগামী বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় সুবিধাভোগীর সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। বাড়ানো হচ্ছে ভাতার পরিমাণও। সব বছর সমান হারে সুবিধাভোগীর সংখ্যা বাড়াতে হবে এমন তো কোনও কথা নাই। দেখতে হবে মনোনীত সুবিধাভোগী মানুষটি প্রকৃত সুবিধা পাওয়ার যোগ্য কিনা?
ফজর | ০৪:৫৪-০৬:০৮ মিনিট ভোর |
---|---|
যোহর | ১২:০৯-০৪:২৫ মিনিট দুপুর |
আছর | ০৪:২৬-০৬:০৬ মিনিট বিকাল |
মাগরিব | ০৬:১০-০৭:২১ মিনিট সন্ধ্যা |
এশা | ০৭:২২-০৮:৪৯ মিনিট রাত |
জুম্মা | ১.৩০ মিনিট দুপুর |