| ২৩ জুন ২০২৫

নিউ ইয়র্ক টাইমসের দৃষ্টিতে
কীভাবে ইরানে হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নিলেন ট্রাম্প

রিপোর্টারের নামঃ ডেস্ক নিউজ
  • আপডেট টাইম : 23-06-2025 ইং
  • 326 বার পঠিত
কীভাবে ইরানে হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নিলেন ট্রাম্প
ছবির ক্যাপশন: নিউ ইয়র্ক টাইমসের দৃষ্টিতে

বৃহস্পতিবার বিকেলে হোয়াইট হাউসের ব্রিফিং রুমে প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট একটি বার্তা পড়ে শোনান। তিনি দাবি করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পক্ষ থেকে এসেছে এই বার্তা। এতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে একটি সম্ভাব্য আলোচনার সুযোগ থাকায় এবং যুদ্ধের দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরে আসার আশায়, প্রেসিডেন্ট আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে ইরানে হামলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। আপাতদৃষ্টিতে এটিই ছিল সত্য, কিন্তু বাস্তবতা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তখনই ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে বোমা হামলার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন। মাত্র ৩০ ঘণ্টার মধ্যেই তিনি সেই আদেশ দেন- যা যুক্তরাষ্ট্রকে মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে অস্থির অঞ্চলের আরেকটি নতুন সংঘাতের কেন্দ্রে নিয়ে আসে। ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলা নিয়ে এসব কথা লিখেছে প্রভাবশালী পত্রিকা নিউ ইয়র্ক টাইমস। 

এতে আরও বলা হয়, এই ‘দুই সপ্তাহ’ বক্তব্য ছিল বড় একটি রাজনৈতিক ও সামরিক বিভ্রান্তির অংশ- যা শুরু হয় ইসরাইলের প্রথম ইরান আক্রমণ থেকে এবং শেষ হয় যখন মার্কিন বি-২ স্টিলথ বোমারু বিমান ইরানে হামলা চালায়। ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর প্রথমবার এই হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। এই ৮ দিনের ঘটনাবলীতে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা, সামরিক কর্মকর্তারা এবং প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎকারে উঠে আসে- কীভাবে প্রেসিডেন্ট যুদ্ধ, কূটনীতি কিংবা তার মিশ্র কোন পথ বেছে নেবেন- সেই দ্বিধার মধ্যেই নানান পক্ষ তাকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছিল। ট্রাম্প নিজেই বলেছিলেন, আমি ঠিক আগ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নিতে পারি, কারণ যুদ্ধের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি প্রতি মুহূর্তে বদলায়। তবে একই সময়ে তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় উসকানিমূলক বার্তা ছড়াচ্ছিলেন। তিনি বলছিলেন, তেহরান থেকে সবাই পালাও! এরপর লিখেছিলেন, তিনি জি-৭ সম্মেলন থেকে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধবিরতির জন্য নয়, ‘আরও বড় কিছু’ করতে বের হয়েছেন। ট্রাম্পের পোস্টগুলোর কারণে ইরান হয়তো আগাম সতর্ক হয়ে যাচ্ছে। এটা নিয়ে পেন্টাগন ও সেন্ট্রাল কমান্ডের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়।

সামরিক কর্মকর্তারা নিজস্ব বিভ্রান্তিকর কৌশল যুক্ত করেন- একটি বোমারু বিমান দল মিসৌরি থেকে পশ্চিম দিকে প্যাসিফিক মহাসাগরের ওপর দিয়ে যাবে, যাতে ট্র্যাকিং সাইটগুলো এগুলোর গতিবিধি দেখতে পায়। আরেকটি প্রকৃত আক্রমণকারী দল ট্রান্সপন্ডার বন্ধ করে পূর্বদিকে ইরানের দিকে অদৃশ্যভাবে এগিয়ে যায়। যেদিন ক্যারোলিন লেভিট ‘দুই সপ্তাহের চিন্তা’ বক্তব্য দেন, সেদিনই এই হামলার প্রস্তুতি চূড়ান্ত ছিল।

ট্রাম্পের একসময়কার অবস্থান ছিল ইরানের বিরুদ্ধে ইসরাইল যেন হামলা না চালায়। কিন্তু ১৩ই জুন শুক্রবার ইসরাইলের প্রথম হামলার পর তার দৃষ্টিভঙ্গি আমূল বদলে যায়। তিনি উপদেষ্টাদের বলেন, ইসরাইলের অভিযান ছিল দুর্দান্ত। তিনি নিজেই দাবি করতে শুরু করেন, এ অভিযানে তারও ভূমিকা রয়েছে। তিনি বন্ধুবান্ধবকে প্রশ্ন করেন, ইসরাইলের হামলা ‘লোকজনের কাছে কেমন লাগছে?’ এরপর বলেন, সবাই বলছে আমাকেও সরাসরি যুক্ত হতে হবে। তিনি ইরানের ফরদো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধিকরণ কেন্দ্রে ৩০,০০০ পাউন্ড ওজনের  জিবিইউ-৫৭ বোমা ফেলতে চান।

ট্রাম্প এবং তার উপদেষ্টারা তীক্ষ্ণ নজর রাখছিলেন টাকার কার্লসনের বক্তব্যের দিকে। তিনি স্পষ্টভাবেই ইরানে যুদ্ধের বিরোধিতা করেন। ট্রাম্প তাকে নিয়ে বিরক্তিও প্রকাশ করেন। 

গোপন ও প্রকাশ্য জরিপগুলোতে উঠে আসে, যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চায় না, তবে তারা ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের পক্ষেও নয়। সেন্টকম কমান্ডার জেনারেল কুরিল্লা এবং জয়েন্ট চিফস চেয়ারম্যান জেনারেল কেইন পুরনো আক্রমণ পরিকল্পনা হালনাগাদ করেন। বি-২ বোমারু বিমানই একমাত্র বিমান, যা জিবিইউ-৫৭ বোমা ফেলতে পারে এবং রাডারে ধরা পড়ে না। একজন সামরিক কর্মকর্তা বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় অপারেশনাল নিরাপত্তা হুমকি ছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেই। সোমবার ট্রাম্প লিখেছেন, আমাদের হাতে ইরানের ওপর সম্পূর্ণ আকাশ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। আমরা জানি আয়াতুল্লাহ (আলি খামেনি) কোথায় লুকিয়ে আছেন। ১৭ই জুন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের একটি সামাজিক মাধ্যম পোস্টে যুদ্ধের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনার ভিত্তি তৈরি হয়। 

ট্রাম্প শুক্রবার বিকেলে বেডমিনস্টার রিসোর্টে ফান্ডরেইজিং ইভেন্টে যান। এতে অনেকে ধরে নেন হামলা হয়তো হচ্ছে না। কিন্তু ঠিক সন্ধ্যা ৫টায় তিনি চূড়ান্ত হামলার নির্দেশ দেন।

রাত ২:১০ (ইরান সময়), একটি বি-২ বিমান ফরদো স্থাপনায় দুটি জিবিইউ-৫৭ বোমা ফেলল। পুরো মিশনে মোট ১৪টি বোমা ব্যবহৃত হয়। এই বোমাগুলো আগে কখনো যুদ্ধে ব্যবহৃত হয়নি। ৩০টি টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র আমেরিকান সাবমেরিন থেকে নাতাঞ্জ ও ইসফাহানে নিক্ষেপ করা হয়। আমেরিকান বিমানগুলো ইরানীয় প্রতিরক্ষা থেকে কোনও প্রতিরোধ পায়নি।

রবিবার সকালে ট্রাম্প বলেন, ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছি। তিনি ইঙ্গিত দেন, যদি ইরান পারমাণবিক কর্মসূচি ছাড়ে, তাহলে এই অভিযান একবারেই শেষ হতে পারে। যদিও ইরান পারমাণবিক স্থাপনায় বড় ক্ষতি হয়েছে, মার্কিন কর্মকর্তারা স্বীকার করেন, সব কিছু ধ্বংস হয়নি। জেডি ভ্যান্স এবং মার্কো রুবিও বলেন, এই যুদ্ধের লক্ষ্য সরকার পরিবর্তন নয়। কিন্তু ট্রাম্প এরপর ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, রেজিম চেঞ্জ শব্দটা এখন রাজনৈতিকভাবে ঠিক নয়, কিন্তু যদি এই সরকার ‘মেক ইরান গ্রেট এগেইন’ করতে না পারে, তাহলে কেন রেজিম চেঞ্জ নয়?’

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
নামাজের সময়সূচী
জাতীয় সঙ্গীত
©সকল কিছুর স্বত্বাধিকারঃ Gen Z Bangladesh Online - জেন জি বাংলাদেশ অনলাইন | আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ