| ২২ জুন ২০২৫


নোবেল বিজয়ী থেকে সফল রাষ্ট্রনায়ক

রিপোর্টারের নামঃ ডেস্ক নিউজ
  • আপডেট টাইম : 20-06-2025 ইং
  • 1525 বার পঠিত
নোবেল বিজয়ী থেকে সফল রাষ্ট্রনায়ক
ছবির ক্যাপশন: নোবেল বিজয়ী থেকে সফল রাষ্ট্রনায়ক

প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের খ্যাতি বিশ্বজোড়া। তিনি-ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর। বিদগ্ধ পণ্ডিত। তার উদ্দীপনামূলক বক্তব্য শোনার জন্য বিদেশিরা ঘণ্টায় প্রায় লাখ ডলার খরচ করতেও দ্বিধা করেন না। পৃথিবীর বহু দেশ তার সামাজিক বিজনেসকে গ্রহণ করে স্বাবলম্বী হচ্ছে। তার সামাজিক ব্যবসার ধারণা বিশ্ব অর্থনীতিতে সাড়া ফেলেছে। এজন্য তিনি নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। ‘থ্রি জিরো’স থিউরির জন্য তিনি আবার নোবেল পেতে পারেন এই আলোচনাও আছে।

বিশ্ববাসী এতদিন ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে এক রূপে দেখেছেন। কিন্তু তিনি এখন একজন রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে নতুন রূপে বিশ্বদরবারে হাজির হয়েছেন। জুলাই বিপ্লব ২০২৪ তাকে এই সুযোগ করে দিয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা তাকে জোর করেই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পদে বসিয়েছেন। পতিত ফ্যাসিবাদী হাসিনার দুঃশাসনে বাংলাদেশ যখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে, তখন গণঅভ্যুত্থানে বহু প্রাণের বিনিময়ে যাত্রা শুরু হয় নতুন এক বাংলাদেশের।

এরপর ছাত্র-জনতা বিদেশে অবস্থান করা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণের অনুরোধ জানান। ড. ইউনূস তাদের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করতে পারেননি। দেশে ফিরে ৮ আগস্ট তিনি যখন সরকারের দায়িত্ব কাঁধে নেন তখন বাংলাদেশের অর্থনীতি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। ব্যাংকগুলো দেউলিয়া। হাসিনা ও তার লুটেরা সহযোগীরা হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে সরিয়ে ফেলেছে। রাজনৈতিক, সামাজিক, মানবিক, ধর্মীয়সহ সব সূচকে বাংলাদেশের অবস্থা শোচনীয়। এ অবস্থায় একটি দেশের দায়িত্ব নেওয়া মানে হিমালয়ের চেয়েও বড় পর্বতের বোঝা কাঁধে নেওয়ার চ্যালেঞ্জ। এর সঙ্গে আছে হাসিনা ও তার দোসরদের ষড়যন্ত্র। রাষ্ট্রের সর্বত্র গুরুত্বপূর্ণ পদে পতিত হাসিনার লোকজন বসানো। তাদের একের পর এক চক্রান্তে সরকারের সামনে চ্যালেঞ্জ আর চ্যালেঞ্জ।

এরই মধ্যে রমজান মাস চলে আসে। রমজান মাস এলেই দেশের সাধারণ মানুষ নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্যের আতঙ্কে থাকেন। কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাস এবার বদলে গেল। ড. ইউনূসের নেতৃত্বের ক্যারিশমায় এবারের রোজায় দ্রব্যমূল্য না বেড়ে বরং কমেছে। মানুষ ১০০ টাকায় তিন কেজি পেঁয়াজ আর পাঁচ কেজি আলু কিনতে পেরেছে। অসাধু ব্যবসায়ীরা সয়াবিন তেল নিয়ে কারসাজি করার অপচেষ্টা করে ব্যর্থ হয় সরকারের কঠোর নজরদারিতে। প্রায় সব ধরনের পণ্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতায় ছিল রমজান মাসে। একবারের জন্যও বিদ্যুৎ যায়নি সারা মাসে।

বিগত দিনগুলোতে ঈদযাত্রার সময় তুঘলকি কাণ্ড ঘটত। বাস-ট্রেনের টিকিট উধাও হয়ে যেত। কালোবাজার থেকে দ্বিগুণ তিনগুণ দামে টিকিট কিনে, বাস-ট্রেন-লঞ্চের ছাদে করে বাড়ি ফিরতে হতো যাত্রীদের। বাড়িতে যাওয়ার কষ্টের কথা মনে করলে অনেকের ঈদ আনন্দ মাটি হয়ে যেত। এ বছর ঈদযাত্রায় বাংলাদেশের মানুষ অন্যরকম বাংলাদেশকে দেখেছে। টিকিটের সংকট ছিল না। বাস-ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় হয়নি। কোথাও কোনো উপচেপড়া ভিড় ছিল না। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ছাড়াই দেড় কোটি মানুষ শুধু ঢাকা থেকে বিভিন্ন জেলায় যাওয়া আসা করেছে।

বহু বছর পর বাংলাদেশের জনগণ ঈদের নামাজে তাদের অভিভাবককে সাধারণ মানুষের কাতারে দেখেছেন। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ঈদের ময়দানে জাতির উদ্দেশে যে ঈদবার্তা দিয়েছেন তা ছিল অসাধারণ। সব শ্রেণিপেশার মানুষকে তিনি সম্বোধন করেছেন। ঐক্যবদ্ধভাবে সবাই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন। ঈদের নামাজের পর তিনি সাধারণ মুসল্লিদের সঙ্গে সালাম ও মোসাবা করেছেন। জনতা ভিড় ঠেলে প্রফেসর ইউনূসের সঙ্গে হাত মেলানোর জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছিল।

ড. ইউনূসের ক্যারিশম্যাটিক নেতৃত্বে দেশের অর্থনীতি এখন সুস্থধারায় ফিরছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। ব্যাংকগুলোতে পর্যাপ্ত ডলারের মজুত রয়েছে। মার্চ মাসে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচাইতে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। দেউলিয়ার মুখে পতিত ব্যাংকগুলো সঠিক ট্র্যাকে নিয়ে আসা হচ্ছে। ব্যবসাবাণিজ্যের দ্বার সবার জন্য উন্মুক্ত হচ্ছে। বাংলাদেশকে বিশ্বের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের জন্য।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার সরকারের আট মাসের শাসনেই জনগণের মন জয় করে নিয়েছেন। তিনি এখন একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর একমাত্র জিয়াউর রহমান ছিলেন রাষ্ট্রনায়ক। জিয়াউর রহমানের ইসলামি চেতনা, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ ও দেশপ্রেমের কাছে সবকিছু হার মেনেছিল। তিনি মাত্র কয়েক বছর দেশ শাসনের সুযোগ পেলেও বাংলাদেশের সব মানুষের ভালোবাসার পাত্রে পরিণত হয়েছিলেন। জিয়াউর রহমানের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূস এখন বাংলাদেশের ত্রাতা, মহানায়ক হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছেন।

জিয়াউর রহমানের পর এতদিন পর্যন্ত কেউ বাংলাদেশকে ভারতের রাহুমুক্ত করতে পারেননি। কিন্তু ইউনূস এসেই বাংলাদেশকে ভারতের রাহুমুক্ত করেছেন। ভারতের চোখে চোখ রেখে কথা বলছেন তিনি। এতদিন ভারতের সিদ্ধান্তে সবকিছু হতো, এখন হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষের সিদ্ধান্তে। এটাকেই বলে প্রকৃত সার্বভৌমত্ব। এই সার্বভৌমত্বের চর্চা শুরু করেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস চীন সফরে গিয়ে বাজিমাত করেছেন। চীনে তাকে যে সম্মাননা দেওয়া হয়েছে তা বিরল। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের চীনা বিনিয়োগের দুয়ার উন্মোচন হচ্ছে। বিমসটেক সম্মেলনে গিয়েও প্রফেসর ইউনূস চমৎকারিত্ব প্রদর্শন করেছেন। ইউনূস-মোদি বৈঠকে হাসিনাকে ফেরত চেয়ে ইউনূস মোদিকে ভড়কে দিয়েছেন। মোদির কাছে হাসিনাকে সরাসরি ফেরত চাওয়ার সাহস অন্য কেউ দেখাতে পারতেন না।

বিডার উদ্যোগে দেশে যে ইনভেস্টমেন্ট সম্মেলন হলো, তাতে এদেশের মানুষের মধ্যে এই বিশ্বাস জন্মে গেছে যে, বাংলাদেশকে সিঙ্গাপুর-মালয়েশিয়ার মতো উন্নত রাষ্ট্র করতে ইউনূসের নেতৃত্ব প্রয়োজন। তিনি যদি পাঁচটি বছরও ঠিকমতো দেশ পরিচালনা করতে পারেন তাহলে বাংলাদেশ অন্য এক উচ্চতায় চলে যাবে।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে যোগ্য লোকের কদর আছে। তিনি দেশ-বিদেশের যোগ্য মেধাবীদের কাজে লাগাচ্ছেন। যখন যাকে কাজে লাগে তখন তাকে কাজে লাগাচ্ছেন। আশিক চৌধুরীর মতো বহু যোগ্যকে তিনি দেশ গঠনের জন্য লাগিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মেধাবী শিক্ষকরা পরিচালনা করছেন। দলীয় সরকারের কারণে যেসব মেধাবী এতদিন সাইডলাইনে ছিলেন তারা এখন কেন্দ্রে আসার সুযোগ পাচ্ছেন।

প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ গণতন্ত্রের প্রকৃত স্বাদ নিতে পারছে। যে যার দাবি ইচ্ছেমতো করতে পারছে। মিটিং মিছিলে ফ্যাসিবাদের কালো ছায়া নেই। সোশ্যাল মিডিয়ায় ইউনূসকে পর্যন্ত সমানে গালি দিলেও পুলিশ তাদের হয়রানি করছে না। দেশের প্রত্যেক জনগণ স্বাধীনভাবে ঘুরছে, মতপ্রকাশ করছে। কোনো ধরনের শঙ্কা কারো মধ্যে কাজ করছে না। বহু বছর পর লাখ লাখ মানুষ স্বজনের কাছে আসতে পেরেছে। আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করতে পারছে।

এতদিন যারা একটি নির্বাচিত সরকারের কথা বলত, তারাও এখন ড. ইউনূসের জাদুতে তন্ময় হয়ে গেছে। সাধারণ মানুষ এখন ড. ইউনূসের মতো দেশপ্রেমিক রাষ্ট্রনায়ককে চায়। তারা আওয়ামী লীগ-বিএনপির পুরোনো ধারার রাজনীতিতে ফেরত যেতে চায় না। দিন যত যাচ্ছে ইউনূসের পক্ষে সবাই আওয়াজ তুলছে। জনগণ বলা শুরু করেছে, বিগত দিনে আমরা দেখেছি সরকার হটানোর আন্দোলন, এখন হবে ইউনূস সরকার রক্ষার আন্দোলন।

পরিশেষে বলতে চাই, আমরা সবাই চাই বাংলাদেশ একটি আধুনিক উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হোক। বাংলাদেশ বিশ্বকে নেতৃত্ব দিক। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব যেন বন্ধুত্বের নামে ধর্ষিত না হয়। বাংলাদেশ থেকে যেন চিরতরে লুটতরাজ, চাঁদাবাজি, অন্যায়, বৈষম্য দূর হয়ে যায়। এজন্য আমাদের যে রাষ্ট্রনায়ক দরকার সেই রাষ্ট্রনায়ক পেয়ে গেছি। রাষ্ট্রনায়ক প্রফেসর ইউনূস আমাদের বড় সম্পদ। এই মুহূর্তে সারা বিশ্বে তার মতো একজন ব্যক্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না। সারা বিশ্বের কাছে তার যে সম্মান সেটাকে আমরা কাজে লাগালে অতি অল্পদিনে বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারে।

আর যদি কাঙ্ক্ষিত সংস্কার ছাড়া তাড়াহুড়ো করে নির্বাচন দেওয়া হয় তাহলে জনগণের স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে। দুর্নীতিবাজরা এমপি-মন্ত্রী হলে আবার নৈরাজ্যের দিকে যাবে দেশ। হয়তো আবার রক্ত ঝরাতে হবে স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার জন্য।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
নামাজের সময়সূচী
জাতীয় সঙ্গীত
©সকল কিছুর স্বত্বাধিকারঃ Gen Z Bangladesh Online - জেন জি বাংলাদেশ অনলাইন | আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ