যশোরে সরকারি ১৩টি ভবন ‘অতিঝুঁকিপূর্ণ’। ১৯৯৫ সাল থেকে ২০২০ সালের মধ্যে এসব ভবনকে ‘অতিঝুঁকিপূর্ণ’ ঘোষণা করা হলেও বেশিরভাগই এখনো অপসারণ করা হয়নি। ফলে যে কোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। এ কারণে দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব ভবন অপসারণ করে নতুন ভবন নির্মাণ করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে, অতিঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকায় অন্তত এমন দুটি স্থাপনা রয়েছে, যেগুলোর ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। ঐতিহ্য রক্ষার্থে কর্তৃপক্ষ এ দুই ভবনকে না ভেঙে সংস্কারের কথা ভাবছে।
গণপূর্ত অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, অতিঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকায় রয়েছে পুলিশ ব্যারাক ভবন-২, জেনারেল হাসপাতালের নার্সেস কোয়ার্টার, কেন্দ্রীয় কারাগারের মহিলা কারারক্ষী ব্যারাক, বিআরটিএ অফিস, জেলা রেজিস্ট্রি অফিসের পুরোনো ভবন, গণপূর্ত উপবিভাগ-১-এর কার্যালয়, কেন্দ্রীয় কারাগারের রূপসা বন্দি ব্যারাক, জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ভবন, হাসপাতালের পুরোনো অপারেশন থিয়েটার ও গাইনি ওয়ার্ড, পুলিশ ব্যারাক ভবন-১, কেন্দ্রীয় কারাগারের অফিস ভবন ও ডেপুটি জেল সুপারের বাসভবন।
এসব স্থাপনা ব্রিটিশ, পাকিস্তান আমল এবং বাংলাদেশের সূচনালগ্নে নির্মিত। এর মধ্যে ব্রিটিশ ও বাংলাদেশ আমলের ভবন রয়েছে পাঁচটি করে। দুটি ভবন তৈরি হয় পাকিস্তান আমলে। আর একটির নির্মাণকাজ পাকিস্তান আমলে শুরু হয়ে শেষ হয় বাংলাদেশ আমলে।
যশোর গণপূর্ত উপবিভাগ-১-এর কার্যালয়টি নির্মিত হয় ১৯৮৮ সালে। মাত্র ৪১ বছরের মধ্যে ভবনটি ‘অতিঝুঁকিপূর্ণ’ হয়ে গেল কেনÑসে প্রশ্ন উঠেছে সংশ্লিষ্ট মহলে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে গণপূর্ত অধিদপ্তর যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম বলেন, যশোরাঞ্চলে ভবনের গড় আয়ু আগে ধরা হতো ৪০ থেকে ৫০ বছর। এখন নির্মাণকাজে পোড়ানো ইটের বদলে সলিড ব্লক ও পাথর ব্যবহার করায় ভবনের আয়ু গড়ে ৬০ বছর ধরা হয়।
এদিকে সুপ্রাচীন জেলা যশোরে এখনো মুঘল বা ব্রিটিশ আমলের কিছু স্থাপনাও টিকে আছে। ১৬৪৯ সালে কেশবপুরের মির্জানগরে নির্মিত হাম্মামখানা, ১৭০০ শতকে তৈরি ঝিকরগাছার কায়েমকোলা মসজিদ, ১৭০০ শতকের মাঝামাঝি নির্মিত অভয়নগরের এগারো শিবমন্দির, যশোর শহরের উপকণ্ঠে চাঁচড়া এলাকায় মুঘল শাসনামলে নির্মিত ৩২২ বছরের পুরোনো জোড়া শিবমন্দির এখনো ব্যবহারযোগ্য রয়েছে।
যশোর জেলা প্রশাসকের পুরোনো বাসভবন, যেটি ‘সাতক্ষীরা হাউস’ নামে পরিচিত, তা ১৯৯৫ সালে অতিঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষিত হয়। এর ঠিক ১০০ বছর আগে ব্রিটিশ শাসনামলে ১৮৯৫ সালে নির্মিত এই ভবনটি এখন আর ব্যবহৃত হচ্ছে না। এটি একটি ঐতিহাসিক ভবন। ফলে এটি ভেঙে না ফেলে সংস্কারের উদ্যোগের কথা জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
জেলা রেজিস্ট্রি অফিসের পুরোনো ভবনটি নির্মিত হয় ১৯০৭-০৮ সালে। এটি একসময় যশোর জেলা কালেক্টরের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হতো। পরে নতুন কালেক্টরেট ভবন নির্মিত হলে এটি জেলা রেজিস্ট্রারের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে। পাশে নতুন ভবন নির্মাণ করায় প্রাচীন ভবনটি এখন অব্যবহৃত পড়ে আছে। এটিরও ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে।
যশোর জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম বলেন, এ দুটি ভবনের ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনা করে এগুলো সংরক্ষণের কথা ভাবা হচ্ছে। সে কারণে ভবন দুটি এখনো ভাঙা হয়নি। দ্রুতই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপেক্ষর সঙ্গে যোগাযোগ করে এগুলো সংস্কার করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলীও মনে করেন, উল্লিখিত প্রাচীন ভবন দুটির ঐতিহাসিক মূল্য আছে। সে কারণে ভবন দুটি সংস্কারের মাধ্যমে সংরক্ষণ করা যেতে পারে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারি কোনো ভবনকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ঘোষণা করা যত সহজ, সেগুলো অপসারণ করে নতুন স্থাপনা নির্মাণের প্রক্রিয়া তার চেয়ে অনেক জটিল ও সময়সাপেক্ষ। প্রাথমিকভাবে সংশ্লিষ্ট ভবন কর্তৃপক্ষ সার্ভে করার জন্য গণপূর্ত অধিদপ্তরকে জানায়। সার্ভে শেষে উপজেলা বা জেলা কার্যালয় প্রশাসনিক চ্যানেল দিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে। পুরোনো ভবন ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত হলে তা প্রক্রিয়া অনুযায়ী ঠিকাদারের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে হয়। এরপর কিছু ব্যতিক্রম বাদে নতুন ভবন নির্মাণের প্রাক্কলন করে গণপূর্ত অধিদপ্তর।
আবার ভবন নির্মাণ খরচ রাজস্ব বাজেট, নাকি উন্নয়ন বাজেট থেকে আসবেÑসেটার ওপরও অনেক কিছু নির্ভর করে। উন্নয়ন বাজেট হলে প্রকল্পের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। প্রাক্কলিত মূল্য সর্বোচ্চ ৫০ কোটি টাকা হলে সেটি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিতে পারে। টাকার অঙ্ক ১০০ কোটি বা তার বেশি হলে সেটি আবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদিত হতে হয়।
ফজর | ০৪:৫৪-০৬:০৮ মিনিট ভোর |
---|---|
যোহর | ১২:০৯-০৪:২৫ মিনিট দুপুর |
আছর | ০৪:২৬-০৬:০৬ মিনিট বিকাল |
মাগরিব | ০৬:১০-০৭:২১ মিনিট সন্ধ্যা |
এশা | ০৭:২২-০৮:৪৯ মিনিট রাত |
জুম্মা | ১.৩০ মিনিট দুপুর |