| ২২ জুন ২০২৫


ইসরাইল-ইরান সংঘাতের সাম্প্রতিক ইতিহাস

রিপোর্টারের নামঃ ডেস্ক নিউজ
  • আপডেট টাইম : 13-06-2025 ইং
  • 9025 বার পঠিত
ইসরাইল-ইরান সংঘাতের সাম্প্রতিক ইতিহাস
ছবির ক্যাপশন: ইসরাইল-ইরান সংঘাতের সাম্প্রতিক ইতিহাস

ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে সংঘাত, যা একসময় গোপন ছিল, তা আবারও তীব্র আকার ধারণ করেছে। শুক্রবার সকালে, ইসরাইল দেশটির পারমাণবিক স্থাপনাতে   বড় আক্রমণ চালানোর সময় বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে তেহরান । এই হামলার ফলে দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলমান সংঘাত মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর সম্পৃক্ততায় যুদ্ধের  রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ইরানের শাসকরা ইসরাইলকে ধ্বংস করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং দীর্ঘদিন ধরে আঞ্চলিক মিলিশিয়াদের সমর্থন করে আসছে যারা এই লক্ষ্যে বিশ্বাসী।  ইসরাইল ইরানকে অস্তিত্বের হুমকি হিসেবে দেখে এবং পারমাণবিক বোমা তৈরি থেকে তাদের  বিরত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। গত বছরও , ইসরাইল এবং ইরান একে ওপরের ওপর বিমান হামলা চালিয়েছে। দু দেশের মধ্যে সংঘাতের সাম্প্রতিক ইতিহাস এখানে দেওয়া হল:

২০১৯

ইরানের মিত্রদের বিরুদ্ধে হামলা

ইরান যাতে তার মিত্রদের অত্যাধুনিক অস্ত্র সরবরাহ করতে না পারে, সেজন্য সিরিয়া, লেবানন এবং ইরাকে ধারাবাহিক হামলা চালিয়েছিল  ইসরাইল।   অভিযোগ,   ইরাক এবং উত্তর সিরিয়ার মধ্য দিয়ে লেবাননে অস্ত্র সরবরাহের লাইন স্থাপনের চেষ্টা করছে ইরান, সেখানে  ইরান দীর্ঘদিন ধরে জঙ্গি গোষ্ঠী হিজবুল্লাহকে সমর্থন করে আসছে। পূর্ব ভূমধ্যসাগর এবং লোহিত সাগরের মধ্য দিয়ে ইরানি তেল ও অস্ত্র বহনকারী জাহাজগুলোতেও হামলা চালিয়েছিল ইসরাইল। 

২০২০

রিমোট-নিয়ন্ত্রিত হত্যাকাণ্ড

নভেম্বরে, ইসরাইল ইরানের শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফখরিজাদেহকে রিমোট-নিয়ন্ত্রিত মেশিনগান দিয়ে হত্যা করে। 

২০২১

সমুদ্রে সংঘর্ষ

ইরান এবং ইসরাইল সমুদ্রেও একে অপরের উপর আক্রমণ শুরু করে।  ওমান উপকূলে যানবাহন পরিবহনকারী একটি ইসরাইলি মালিকানাধীন জাহাজে ফেব্রুয়ারিতে বিস্ফোরণের পিছনে ইরানের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী  নেতানিয়াহু। মার্চ মাসে ইরান ইসরাইলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে যে তারা ইসরাইলের উপকূল থেকে প্রায় ৫০ মাইল দূরে একটি ইরানি পণ্যবাহী জাহাজকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে।  এপ্রিল মাসে, লোহিত সাগরে অবস্থানরত একটি ইরানি সামরিক জাহাজ স্পষ্টতই ইসরাইলি মাইন হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।  এই ধরনের অভিযান সারা বছর ধরে বিদ্যমান ছিল। 

২০২২

একজন ইরানি অফিসারকে হত্যা করা হয়

মে মাসে, মোটরসাইকেলে আসা দুইজন আততায়ী ইরানের ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পসের একজন কর্মকর্তা কর্নেল সায়াদ খোদায়িকে গুলি করে হত্যা করে।  ইসরাইলি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে তিনি একটি গোপন অপারেশন ইউনিটকে কমান্ড করতে সাহায্য করেছিলেন যারা হত্যা এবং অপহরণ পরিচালনা করত।  ইসরাইল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এই হত্যাকাণ্ডে তাদের ভূমিকার কথা নিশ্চিত করে । 

দুই বিজ্ঞানীর মৃত্যু

একটি সামরিক গবেষণা কেন্দ্রের একজন বিমান প্রকৌশলী আইয়ুব এনতেজারি এবং একজন ভূতত্ত্ববিদ কামরান আগামোলেই, দুজনেই মে মাসে খাদ্যে বিষক্রিয়ার  পর মারা যান।  ইরান বলেছে যে ইসরাইল তাদের বিষ প্রয়োগ করেছে, কিন্তু ইসরাইল এবিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে  চায়নি। 

২০২৩, ৭ অক্টোবরের হামলা

ইরান সমর্থিত হামাসের নেতৃত্বে ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা  ইসরাইলে আক্রমণ করে, যার ফলে গাজায় এক ভয়াবহ যুদ্ধ শুরু হয়।  হামাসের সাথে সংহতি প্রকাশ করে, লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ইয়েমেনের হুথিসহ এই অঞ্চলের অন্যান্য ইরান-সমর্থিত মিলিশিয়ারাও ইসরাইলে আক্রমণ করে।  ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ৭ অক্টোবরের হামলায় ইরানের কোনও ভূমিকা থাকার কথা অস্বীকার করেছেন।  তবে হামাস নেতারা আঞ্চলিক মিত্রদের কাছ থেকে সমর্থন পাওয়ার বিষয়ে বিস্তৃতভাবে কথা বলেছেন এবং নথিপত্রে দেখা গেছে যে গ্রুপটি ইরানের সাথে তাদের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেছে। 

সিরিয়ায় বিমান হামলা

ডিসেম্বরে,   সিরিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় একজন উচ্চ-স্তরের ইরানি কর্মকর্তাকে হত্যার জন্য ইসরাইলকে অভিযুক্ত করে ইরান । 

২০২৪

দামাস্কাসে  হামলা, এবং কয়েক দফা প্রতিশোধ

এপ্রিল মাসে, দামাস্কাসে  ইরানি দূতাবাস ভবনে ইসরাইলি বিমান হামলায় তিনজন শীর্ষ ইরানি কমান্ডার এবং চারজন কর্মকর্তা নিহত হন।  কয়েক সপ্তাহ পরে, তেহরান ইসরাইলে ৩০০ টিরও বেশি ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে, যার প্রায় সবকটিই গুলি করে ভূপাতিত করা হয়।  এর পরপরই, ইসরাইল ইরানের একটি বিমান বিধ্বংসী ব্যবস্থায় আক্রমণ করে।  এই সিস্টেম   পারমাণবিক স্থাপনা রক্ষা করার উদ্দেশে স্থাপন করা হয়েছিল। 

তেহরানে একটি হত্যাকাণ্ড

জুলাই মাসে, হামাসের রাজনৈতিক নেতা ইসমাইল হানিয়াহ তেহরানের ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস কর্তৃক পরিচালিত একটি গেস্টহাউসে বিস্ফোরণে নিহত হন।  পরে ইসরাইল নিশ্চিত করে যে তারা এই হত্যাকাণ্ডের পিছনে ছিল। 

পেজার আক্রমণ

সেপ্টেম্বরে,  হিজবুল্লাহ সদস্যদের লক্ষ্য করে এক বিশাল পেজার আক্রমণে একটি চোখ হারিয়েছিলেন লেবাননে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত মোজতবা আমিনি।   পরবর্তী দিনগুলোতে  ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলোতে  একই ধরণের হামলা চালানো হয়েছিল, যেখানে কয়েক ডজন মানুষ নিহত এবং হাজার হাজার আহত হয়েছিল।  পরে ইসরাইল নিশ্চিত করে যে তারাই এই হামলা চালিয়েছে। 

হিজবুল্লাহ নেতা নিহত

সেপ্টেম্বরে, লেবাননের রাজধানী বৈরুতের কাছে বিমান হামলায় হিজবুল্লাহর নেতা হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যা করে ইসরাইল। 

ইসরাইলকে লক্ষ্য করে ইরানের  গুলিবর্ষণ 

অক্টোবরে ইরান ইসরাইলের  নাসরুল্লাহ,   হানিয়া এবং একজন ইরানি কমান্ডারকে হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে ইসরাইলে প্রায় ১৮০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে।  বেশিরভাগই প্রতিহত করা হয়েছিল। 

ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে লক্ষ্য করে ইসরাইলের হামলা

অক্টোবরের শেষের দিকে ইসরাইল ইরানের উপর বিমান হামলা চালিয়ে  গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো রক্ষার জন্য তৈরি বিমান-প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেয়। ইরানি ও ইসরাইলি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এপ্রিল ও অক্টোবরে বিমান হামলায় রাশিয়ার কাছ থেকে ইরান যে বিমান-প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কিনেছিল, তা ধ্বংস হয়ে যায়।  যার  মধ্যে একটি ছিল  মধ্য ইরানে।  দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচির জন্য এটি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

২০২৫

নেতানিয়াহু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে  হামলার পরিকল্পনার প্রস্তাব দেন, যা নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের অন্দরে কয়েক মাস ধরে বিতর্ক বিদ্যমান ছিল ।  এপ্রিল মাসে,  ট্রাম্প হামলার  পরিবর্তে কূটনৈতিক পথ  অনুসরণ করার সিদ্ধান্ত নেন। সম্প্রতি, ইরান সমস্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ করার জন্য ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে, সেইসঙ্গে জানিয়ে দিয়েছে তাদের  পারমাণবিক কর্মসূচি  অব্যাহত থাকবে । ১২ জুন,  ট্রাম্প বলেছিলেন যে ইসরাইল ইরানে হামলা চালাতে পারে, যা আলোচনাকে বানচাল করে দিতে পারে ।   


সূত্র : নিউ ইয়র্ক টাইমস

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
নামাজের সময়সূচী
জাতীয় সঙ্গীত
©সকল কিছুর স্বত্বাধিকারঃ Gen Z Bangladesh Online - জেন জি বাংলাদেশ অনলাইন | আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ