অভ্যন্তরীণ উৎসের পাশাপাশি আন্তঃসীমান্ত নদ-নদী হয়ে অন্যান্য দেশ থেকেও বঙ্গোপসাগরে জমা হচ্ছে বিপুল প্লাস্টিক বর্জ্য। হুমকিতে পড়েছে দেশের মৎস্যসম্পদ। খাদ্যচক্রের মাধ্যমে মানবদেহে ছড়িয়ে পড়ছে ক্ষতিকর মাইক্রো প্লাস্টিক। এ পরিস্থিতিতে দূষণ প্রতিরোধে প্রতিবেশী দেশগুলোর সমন্বয়ে উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। আর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, বাংলাদেশের ক্ষতির বিষয়টি আন্তর্জাতিক আইনে স্বীকৃতির জন্য তৎপর সরকার।
দেশের নদ-নদী হয়ে প্রতিদিন বঙ্গোপসাগরে পড়ছে প্রায় ৭৩ হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য। স্তূপ জমেছে মাইক্রো প্লাস্টিকের। এর পরিমাণ প্রায় ৩০০ কোটি টন। জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচি ও ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটির গবেষণায় উঠে এসেছে এই তথ্য।
চীন, ভারত ও নেপাল থেকেও আন্তঃসীমান্ত নদ-নদী হয়ে বঙ্গোপসাগরে প্রতিনিয়ত পড়ছে প্লাস্টিক বর্জ্য। এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (এসডো) গবেষণা বলছে, বছরে ২৬ লাখ টনের বেশি একবার ব্যবহৃত প্লাস্টিক জমা হচ্ছে সাগরে। এর মধ্যে ভারত থেকেই আসছে ৪ লাখ ৭০ হাজার ৪৩৯ টন।
পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বলছেন, সমুদ্র দূষণের কারণে খাদ্যচক্রের মাধ্যমে মানবদেহে ছড়িয়ে পড়ছে মারাত্মক ক্ষতিকর মাইক্রো প্লাস্টিক। প্রাণিবিজ্ঞানী ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ড. গাউসিয়া ওয়াহিদুন্নেসা চৌধুরী বলেন, খাদ্য চক্রের বিভিন্ন স্তর রয়েছে। প্রতিটি স্তরের প্রক্রিয়াতেই মাইক্রো প্লাস্টিকের উপস্থিতি পেয়েছি। আন্ধারমানিক নদীতে ১১টি মাছের মধ্যে মাইক্রো প্লাস্টিক পেয়েছি। এমনকি ইলিশের মধ্যেও মাইক্রো প্লাস্টিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
সমাজবিজ্ঞানী ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ড. শাহরিয়ার হোসেন বলেন, ভারত ও মিয়ানমার থেকে প্রচুর পরিমাণে বর্জ্য বাংলাদেশ ঢুকছে। এটি নদীর স্বাভাবিক প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করার পাশাপাশি মৎস্যসম্পদকে ক্ষতির মুখে ফেলছে। সবশেষে যা বঙ্গোপসাগরে গিয়ে জমা হচ্ছে। ফলে মাইক্রো প্লাস্টিক আবার লবণের মাধ্যমে মানুষের কাছে ফিরে আসছে।
সমুদ্র থেকে বর্জ্য অপসারণে আন্তর্জাতিক সহায়তার জন্য এখনই দাবি তুলে ধরার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। বলছেন, প্রতিবেশী দেশগুলোর সমন্বয়ে উদ্যোগ নেয়াও প্রয়োজন। ড. শাহরিয়ার হোসেন বলেন, ৪০ শতাংশ প্লাস্টিক বর্জ্য ও অন্যান্য যেসব বর্জ্য প্রতিবছর আসছে, এটি এককভাবে বাংলাদেশ কন্ট্রোল করতে পারবে না। তাই আন্তর্জাতিক ফোরামে এটি নিয়ে জোরালো দাবি তুলতে হবে।
পরিবেশ উপদেষ্টা জানান, বাংলাদেশের ক্ষতির বিষয়টি আন্তর্জাতিক আইনে স্বীকৃতির জন্য তৎপর সরকার। আন্তঃসীমান্ত নদ-নদীগুলো দিয়ে প্লাস্টিক বর্জ্য বাংলাদেশে এসে জমা হচ্ছে। নিজেদের সমস্যার পাশাপাশি এসব বর্জ্য সমস্যা তৈরি করছে। বাংলাদেশের ক্ষতির বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক আইনে স্বীকৃতির জন্য তুলে ধরার পাশাপাশি বিভিন্ন গ্রুপের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।
দূষণ থেকে সমুদ্রকে বাঁচাতে না পারলে দুই যুগ পর বহুমাত্রিক সংকট তৈরির শঙ্কাও পরিবেশ উপদেষ্টার। তিনি বলেন, ২০৫০ সালে সমুদ্রে যতটুকু মাছ থাকবে, তার চেয়ে বেশি থাকবে মাইক্রো প্লাস্টিক।
ফজর | ০৪:৫৪-০৬:০৮ মিনিট ভোর |
---|---|
যোহর | ১২:০৯-০৪:২৫ মিনিট দুপুর |
আছর | ০৪:২৬-০৬:০৬ মিনিট বিকাল |
মাগরিব | ০৬:১০-০৭:২১ মিনিট সন্ধ্যা |
এশা | ০৭:২২-০৮:৪৯ মিনিট রাত |
জুম্মা | ১.৩০ মিনিট দুপুর |