যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যকার বহুল প্রতীক্ষিত পঞ্চম দফার পরমাণু আলোচনা শুক্রবার ওমানের মধ্যস্থতায় রোমে অনুষ্ঠিত হয়েছে। উভয়পক্ষ আলোচনা ‘গঠনমূলক’ বললেও কার্যত কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেশ কয়েকটি মূল ইস্যু এই আলোচনা বারবার অচলাবস্থার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
চলুন এক নজরে দেখে নেওয়া যাক আলোচনা থমকে যাওয়ার পেছনের প্রধান পাঁচটি কারণ:
১. ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ
ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম এই আলোচনার সবচেয়ে স্পর্শকাতর বিষয়। যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো আশঙ্কা করে, ইরান গোপনে পরমাণু অস্ত্র তৈরির পথে এগোচ্ছে। ইরান এই অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে বলছে, তাদের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ ও বেসামরিক উদ্দেশ্যে।
ইরান-যুক্তরাষ্ট্র পরমাণু আলোচনা থমকে গেল পাঁচ কারণে
পরমাণু আলোচনা / কোন পথে যাচ্ছে পরিস্থিতি?
মার্কিন প্রতিনিধি স্টিভ উইটকফ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ওয়াশিংটন এক শতাংশ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণও মেনে নেবে না। এর জবাবে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বলেছেন, সমৃদ্ধকরণ প্রশ্নে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। তিনি টুইটে লেখেন, ‘শূন্য পারমাণবিক অস্ত্র = চুক্তি সম্ভব। শূন্য সমৃদ্ধকরণ = চুক্তি অসম্ভব।’
এই অবস্থানগত পার্থক্যই আলোচনাকে অচলাবস্থায় ফেলেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
২. আলোচনার পরিধি নিয়ে দ্বন্দ্ব
তেহরান চাইছে আলোচনার বিষয় যেন কেবল পরমাণু কর্মসূচি ও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের মধ্যে সীমিত থাকে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র চাইছে ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও আঞ্চলিক মিত্রদের কার্যক্রম নিয়েও আলোচনা হোক।
বিশ্লেষকদের মতে, লেবাননের হিজবুল্লাহ, গাজার হামাস ও ইয়েমেনের হুথিদের প্রতি ইরানের সমর্থন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগের অন্যতম কারণ। কিন্তু ইরান বলছে, এসব প্রতিরক্ষা বিষয় এবং তাদের সার্বভৌম অধিকার আলোচনার বিষয় হতে পারে না।
৩. নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিরূপ প্রভাব
আলোচনার ঠিক আগে ও চলাকালীন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের বিভিন্ন খাতের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, যার ফলে আলোচনার পরিবেশ আরও জটিল হয়ে উঠেছে। গত বুধবার ইরানের নির্মাণ খাতকে লক্ষ্য করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এর আগে তেল ও গ্যাস খাতেও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাঈল বাকায়ি বলেছেন, এই নিষেধাজ্ঞাগুলো মার্কিন সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। ইরানের মতে, এমন পদক্ষেপ আলোচনায় তাদের সদিচ্ছাকে ক্ষুণ্ন করছে।
৪. সামরিক হুমকি ও পাল্টা হুঁশিয়ারি
আলোচনার বাইরে থেকেও উভয় পক্ষের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা বেড়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আলোচনার ব্যর্থতায় সামরিক ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। এর জবাবে ইরান বলেছে, যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরাইল কোনো হামলা চালায়, তবে তার ‘গুরুতর পরিণতি’ হবে।
ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব স্টাফ মোহাম্মদ বাগেরি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো ভুল পদক্ষেপ আফগানিস্তান ও ভিয়েতনামের মতো ফল বয়ে আনবে।
৫. তৃতীয় পক্ষের প্রভাব ও চাপ
ইসরাইল ও সৌদি আরবের মতো তৃতীয় পক্ষ আলোচনায় প্রভাব বিস্তার করছে। ইসরাইল ইতোমধ্যে ইরানের পরমাণু স্থাপনায় হামলার প্রস্তুতির ইঙ্গিত দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ইরান সন্দেহ করছে, যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের চাপেই আলোচনার বিষয়বস্তু প্রসারিত করতে চাইছে।
ইরানের রক্ষণশীল পত্রিকা ‘কায়হান’ লিখেছে, ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর সমন্বিত তৎপরতা এই আলোচনাকে অচলাবস্থায় ঠেলে দিচ্ছে।
ইরান-যুক্তরাষ্ট্র পরমাণু আলোচনা আপাতত স্থবির অবস্থায় রয়েছে। সমৃদ্ধকরণ, নিষেধাজ্ঞা ও আলোচনা কাঠামো নিয়ে দুই পক্ষের অবস্থান এতই বিপরীত যে কোনো সমঝোতা আপাতত দুরূহ। তবে উভয়পক্ষ আলোচনার দরজা খোলা রেখেছে বলেই কূটনৈতিক মহলে আশাবাদের কিছু জায়গা এখনো রয়েছে।
ফজর | ০৪:৫৪-০৬:০৮ মিনিট ভোর |
---|---|
যোহর | ১২:০৯-০৪:২৫ মিনিট দুপুর |
আছর | ০৪:২৬-০৬:০৬ মিনিট বিকাল |
মাগরিব | ০৬:১০-০৭:২১ মিনিট সন্ধ্যা |
এশা | ০৭:২২-০৮:৪৯ মিনিট রাত |
জুম্মা | ১.৩০ মিনিট দুপুর |