| ০৭ জুন ২০২৫

লিটন, উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপিয়ে আর কতদিন?

রিপোর্টারের নামঃ ডেস্ক নিউজ
  • আপডেট টাইম : 22-05-2025 ইং
  • 15010 বার পঠিত
লিটন, উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপিয়ে আর কতদিন?
ছবির ক্যাপশন: লিটন, উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপিয়ে আর কতদিন?

প্রথম টি-টোয়েন্টিতে অল্পের জন্য রক্ষা, দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে হেরেই যখন বসল বাংলাদেশ, তখন একটা শঙ্কা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল। সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছে সিরিজ হারের শঙ্কা। সে শঙ্কা শেষমেশ সত্যিই হলো। বাংলাদেশ এবার আইসিসির সহযোগী সদস্য দলটার সিরিজটাই খুইয়ে বসল। 

এমন কিছু বাংলাদেশের বাস্তবতায় কি খুব অস্বাভাবিক কিছু? উত্তরটা হচ্ছে– না। কেন? কারণ, সহযোগী দেশের কাছে হেরে যাওয়ার অভ্যাসটা যে বাংলাদেশের বেশ করে আছে।

আয়ারল্যান্ডের কাছে ২০০৯ সালে হেরে শুরু। এরপর স্কটল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, হংকং, যুক্তরাষ্ট্র ও সবশেষ আরব আমিরাত। এদের কাছে ম্যাচ হারের যন্ত্রণার সঙ্গে বেশ পরিচিত বাংলাদেশ। 

তবে নতুন এক অভিজ্ঞতা হয় গেল বছরের এই সময়ে। গত বছরের ২৩ মে টানা দুই ম্যাচ হেরে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সিরিজ হেরে বসে বাংলাদেশ। নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সিরিজ হারে সহযোগী কোনো দেশের কাছে। তার এক বছর না যেতে আবারও সে দুঃস্মৃতি ফিরে এলো বাংলাদেশ শিবিরে।

একটা অঘটন একবারে সীমাবদ্ধ থাকলে তাকে অঘটন বলেই উড়িয়ে দেওয়া যায়। কিন্তু তা বারবার হতে থাকলে সেটাকে অঘটন বলার উপায় থাকে না। সেটা নতুন বাস্তবতা বনে যায়। আর এ বাস্তবতা বাংলাদেশের জন্য সমস্যাসঙ্কুল বৈকি!

সে সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য আগে সমস্যাটাকে স্বীকৃতি দিতে হয়, মেনে নিতে হয় যে সবকিছু ঠিকঠাক চলছে না, প্রক্রিয়ায় ভুল আছে। কিন্তু বাংলাদেশ দলের সংবাদ সম্মেলনে কান পাতলে আপনি তা শুনতেই পাবেন না।

গেল বছর যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হারের পর তৎকালীন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত বলেছিলেন, ‘আমার মনে হয় এমন হার আমাদের জন্য অনেক হতাশাজনক। মূল কথা হলো- আমরা ম্যাচ হেরে গেছি। সত্যি কথা বলতে গেলে আমরা ভালো ক্রিকেট খেলিনি। আমার মনে হয় স্কিলে কোনো সমস্যা নেই। আমাদের নিজেদের মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হবে। গত দুই ম্যাচে আমরা ভালো খেলিনি।’

আমিরাতের কাছে হেরে লিটনের কথাটা শুনুন, ‘আজ আমরা ব্যাটিংয়ে কিছু ভুল করেছি। আমার মনে হয় এমন কিছু আমরা এই উইকেট, এই কন্ডিশনে করতে চাইনি; তিন ম্যাচেই আমরা আগে ব্যাট করেছি, শিশিরই মূল নিয়ামক ছিল এখানে। তারা খুবই ভালো খেলেছে, ভালো বল করেছে। কিন্তু ব্যাটিংয়ে তারা শিশিরের সুবিধা পেয়েছে।’

লিটনের শিশিরের এই যুক্তির যথার্থতা উবে যাচ্ছে প্রথম আর তৃতীয় ম্যাচে মোস্তাফিজুর রহমান আর রিশাদ হোসেনের বোলিং দেখলেই। শিশিরে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয় তেমন বোলারদের, যারা হাতের তালু আর কবজির ব্যবহার করেন সবচেয়ে বেশি। প্রথম টি-টোয়েন্টিতে মোস্তাফিজ ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন একই রকমের কন্ডিশনে, গত রাতে রিশাদও শুরুর তিনটি ওভার করেছেন তাই। তবু লিটনের কাছে এই হারের একমাত্র ব্যাখ্যা হয়ে রইল ওই ‘শিশির’ই!

সহযোগী দেশের বিপক্ষেই এমন কিছু ঘটে যাচ্ছে হরহামেশা, পূর্ণ সদস্যদের বিপক্ষে কী হয় সেটা ভাবুন একবার! বেশি দূর যেতে হবে না, এই তো জিম্বাবুয়ে সিরিজেও তো, যারা শেষ চার বছর ধরে টেস্ট জেতে না, তাদের কাছে হারল বাংলাদেশ। তার আগে আফগানিস্তানের কাছে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে সিরিজ হার, তারও আগে ওই যুক্তরাষ্ট্র সফর… বাংলাদেশ ক্রিকেট হারছে প্রতিনিয়ত, গড়ছে বিব্রতকর সব রেকর্ড। সব মিলিয়ে একটু একটু করে অন্ধকারটা আরও ঘণীভূতই হচ্ছে।

তার ছাপটা যে পড়ছে না, বিষয়টা কিন্তু মোটেও তেমন নয়। বাংলাদেশ ক্রিকেট এখন সম্প্রচারকারী প্রতিষ্ঠানই পাচ্ছে না। জিম্বাবুয়ে সিরিজ দেখাতে হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত টিভি চ্যানেল বাংলাদেশ টিভিতে। তারও অনেক আগে থেকে দর্শক মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছে দেশের ক্রিকেট থেকে। একটা সময় যেখানে বাংলাদেশের ম্যাচের সময় গোটা শহর প্রায় থমকে যেত, সে ম্যাচ নিয়ে এখন আলোচনাই হয় না; ৫০ টাকার টিকিট ছেড়েও গ্যালারি থাকে ফাঁকা পড়ে, ওদিকে বাফুফে এখন সাহস করছে ৪০০ টাকায় টিকিট বিক্রির! শেষ কবে বাংলাদেশের ম্যাচে ভরা গ্যালারি দর্শক এসেছে, সে স্মৃতি খুঁজে বের করতে হলে ফিরে যেতে হয় অন্তত বছর দুয়েক আগে। দেশের ক্রিকেটের ব্র্যান্ড ভ্যালু যে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে, তা একেবারে পরিষ্কার।

দল যে সমস্যায় আছে, তা স্পষ্ট, তার প্রভাবটাও পরিষ্কার। এমন পরিস্থিতিতেও টনক নড়েনি। এবার যেমন উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপিয়ে দায় সারতে চাইছেন অধিনায়ক লিটন দাস! কিন্তু প্রশ্নটা হচ্ছে, দেয়ালে তো পিঠ ঠেকেই আছে, এভাবে আর কতদিন?

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
নামাজের সময়সূচী
জাতীয় সঙ্গীত
©সকল কিছুর স্বত্বাধিকারঃ Gen Z Bangladesh Online - জেন জি বাংলাদেশ অনলাইন | আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ