| ২১ এপ্রিল ২০২৫
ad728

পরিশেষে দেশব্যাপী শুরু হলো ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’

রিপোর্টারের নামঃ Momtaz Uddin Ahmed Emon
  • আপডেট টাইম : 09-02-2025 ইং
  • 10897 বার পঠিত
পরিশেষে দেশব্যাপী শুরু হলো ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’
ছবির ক্যাপশন: পরিশেষে দেশব্যাপী শুরু হলো ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’

গাজীপুরে ছাত্র-জনতার ওপর সন্ত্রাসী আক্রমণের ঘটনার প্রেক্ষাপটে সারাদেশে যৌথ বাহিনীর বিশেষ অভিযান শুরু হয়েছে। গতকাল শনিবার থেকে শুরু হয়েছে এ অপারেশন কার্যক্রমের নাম দেওয়া হয়েছে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’।

এর আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ বিভাগ থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ অভিযানের কথা জানানো হয়। এর মধ্য দিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার ঠিক ছয় মাসের মাথায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বড় ধরনের অপারেশন শুরু হলো।

সরকারের এ অপারেশনকে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত উল্লেখ করে স্বাগত জানিয়েছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। তারা বলেছেন, আগেই এ ধরনের অপারেশন দরকার ছিল। এটা হলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগেই উন্নত হতো।

গাজীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন গাজীপুর মহানগর পুলিশের কমিশনার নাজমুল করিম খান। তিনি বলেন, রাতে যে ঘটনাটি ঘটেছে, তাতে পুলিশ বাহিনীর পক্ষ থেকে আমি ক্ষমা চাচ্ছি। আমি ব্যর্থতা স্বীকার করে নিচ্ছি। হামলাকারী কাউকে ছাড়া হবে না, প্রতিটি হামলার জবাব দেওয়া হবে। যেসব পুলিশ রেসপন্স করতে দেরি করেছে, তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’

এদিকে ওই হামলার ঘটনায় গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ প্রতিবাদ হয়েছে। এ সময় আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি করা হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, পুলিশ, সশস্ত্র বাহিনী (সেনা, নৌ ও বিমান), বিজিবির সমন্বয়ে গঠিত এ অপারেশনের কার্যক্রম পরিচালিত হবে। কেন্দ্রীয়ভাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ কার্যক্রম মনিটরিং করছে। অপারেশন কার্যক্রম ২৪ ঘণ্টা মনিটরিং করার জন্য মন্ত্রণালয়ে স্থাপন করা হয়েছে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। অপারেশনের বিষয়ে আইজিপি শেখ বাহারুল আলম আমার দেশকে জানান, আজ রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিস্তারিত ব্রিফিংয়ে জানাবে। সে পর্যন্ত ধৈর্য ধরতে বলেন তিনি।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে বিদেশে পলাতক স্বৈরাচার শেখ হাসিনা বুধবার রাতে অনলাইনে যুক্ত হওয়ায় ছাত্র-জনতা ওই রাতেই ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে হামলা করে। পরে ক্রেন ও এক্সকাভেটর এনে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়ি গুঁড়িয়ে দেয়। একই রাতে সুধাসদন, খুলনার শেখবাড়িসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পতিত সরকারের এমপি-মন্ত্রী ও নেতাদের বাড়িঘর ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা।

‘বুলডোজার মার্চ’ নামে এই কর্মসূচি বৃহস্পতি ও শুক্রবারও অব্যাহত থাকে। এ কর্মসূচি চলাকালে গাজীপুর, সাভার, নোয়াখালীসহ কয়েকটি স্থানে আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগের দোসররা ছাত্রদের ওপর আক্রমণ করে। কোথাও কোথাও ডাকাত আখ্যায়িত করে তাদের ওপর হামলা করা হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ঘটনা ঘটেছে গাজীপুরে।

জানা গেছে, শুক্রবার রাতে গাজীপুর সিটির ধীরাশ্রমে অবস্থিত পতিত সরকারের মন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম মোজাম্মেল হোসেনের বাড়িতে ছাত্র-জনতা হামলা করে। এ সময় মাইকে ঘোষণা দিয়ে তাদের ডাকাত আখ্যায়িত করে ঘিরে ফেলেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও তাদের সমর্থকরা। এ সময় ছাত্র-জনতাকে বেধড়ক মারধর করা হয়। ওই ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়। তাদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

অবশ্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতাদের দাবি, সন্ত্রাসীরা ওই বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করতে গেছে—এমন খবর পেয়ে তারা সেখানে যান। আগের অগ্রগামী একটি টিম সেখানে গিয়ে লুটপাট করতে দেখে তার প্রতিবাদ জানায়, এ সময় আরো লোকজন জড়ো করে তাদের ওপর আক্রমণ করা হয়। পরে বৈষম্যবিরোধী অন্য ছাত্ররা গেলে তাদেরও মারধর করেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ও সমর্থকরা। পরে এদের সঙ্গে স্থানীয় কিছু মানুষও যোগ দেন।

গতকাল শনিবার স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী আহত ব্যক্তিদের সঙ্গে দেখা করে তাদের খোঁজখবর নিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। সেখানে তিনি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেছেন, ছাত্রদের ওপর হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের প্রত্যেককে চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মাথায় অপারেশন ‘ডেভিল হান্ট’-এর ঘোষণা আসে।

এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গাজীপুরে ছাত্র-জনতার ওপর সন্ত্রাসী আক্রমণের ঘটনায় আজ (গতকাল শনিবার) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর সমন্বয়ে একটি সভা হয়েছে। সভায় সংশ্লিষ্ট এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে ও সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনতে যৌথ বাহিনীর সমন্বয়ে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়।

‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’-এর ব্যাপারে আজ রোববার সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানানো হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, শুক্রবার রাতে পতিত স্বৈরাচারের সন্ত্রাসীদের হামলায় কয়েকজন ছাত্র-জনতা গুরুতর আহত হয়েছেন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচ্চপর্যায়ের একাধিক সূত্র জানায়, গাজীপুরে শুক্রবার রাতে ছাত্র-জনতার ওপর সন্ত্রাসী আক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে নড়েচড়ে বসে সরকার। গত ছয় মাসে সরকারের উদারতার সুযোগে শেখ হাসিনার সশস্ত্র গুন্ডাবাহিনী দেশব্যাপী হামলা চালাতে প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানতে পারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

একাধিক সূত্র বলছে, সেনাবাহিনী অলরেডি গ্রাউন্ডে রয়েছে। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না থাকলেও বিভিন্ন সময়ে অভিযানের সুবিধার্থে সেনাবিহিনীর সহযোগিতা নেওয়া হচ্ছে। এখন যেহেতু নির্দিষ্ট ফরম্যাটে অভিযান শুরু হয়েছে, তাই প্রতিটি মেট্রোপলিটন এলাকায় ও জেলায় সমন্বিত নিয়ন্ত্রণকক্ষ রাখা হচ্ছে। আগে দরকার হলে এক বাহিনী আরেক বাহিনীর সহযোগিতা নিত। এখন সব অভিযান চালানো হবে সমন্বিতভাবে।

এদিকে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর শেখ হাসিনা অনলাইনে নানা উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে আসছেন। তার দলের আরো অনেক নেতাও এ ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। বৃহস্পতিবার এ ধরনের একটি অডিওবার্তা ভাইরাল হয়েছে।

তাতে শোনা যায়, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের একটি বক্তব্য ভাইরাল হয়েছে। তাতে শোনা যায় জাহাঙ্গীর নেতাকর্মীদের ঢাকা, ময়মনসিংহ, গাজীপুরসহ সারাদেশে আক্রমণের উসকানি দেন। তিনি বলেন, ‘যে শহরে আমাদের দিনে চলতে দেবে না, সেই শহরের মানুষ রাতে ঘুমাতে পারবে না।’

যৌথ বাহিনীর অপারেশন বিষয়ে জানতে চাইলে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান ড. ওমর ফারুক বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ ধরনের অপারেশন দরকার ছিল। তবে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’-এর মাধ্যমে কেউ যেন অ্যাবিউজের (অপব্যবহারের) শিকার না হন, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।’

সামরিক বিশ্লেষক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) দিদারুল আলম অমার দেশকে বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতির লক্ষ্যে এই অপারেশন খুবই সঠিক সিদ্ধান্ত। সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় এই কার্যক্রম সফল হবে বলে মনে করেন তিনি।

অপরাধ বিশ্লেষক ও সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা খান সাঈদ হাসান মনে করেন, অপারেশন জরুরি ছিল। সশস্ত্র বাহিনী মাঠে আছে, এখন সমন্বয় করে কাজ করবে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে সফল হবে বলে আশাবাদী তিনি।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) তাহেরুল হক চৌহান আমার দেশকে গত রাতে বলেন, গাজীপুরে ইতোমধ্যে অভিযান শুরু হয়েছে। অপরাধী, দুর্বৃত্তদের আইনের আওতায় আনতে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ad728
ফেসবুকে আমরা...
নামাজের সময়সূচী
জাতীয় সঙ্গীত
©সকল কিছুর স্বত্বাধিকারঃ Gen Z Bangladesh Online - জেন জি বাংলাদেশ অনলাইন | আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ
সকল কারিগরী সহযোগিতায় ইন্টিগসোল