শেখ পরিবারসহ ১১টি গ্রুপের এক লাখ ৩০ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকার অভ্যন্তরীণ স্থাবর সম্পদ সংযুক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। সোমবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর এবং বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান এএফএম শাহীনুল ইসলাম।
প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, শেখ পরিবারসহ ১১টি গ্রুপের বর্তমানে অভ্যন্তরীণ স্থাবর সম্পদ সংযুক্ত আছে ১ লাখ ৩০ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা। বৈদেশিক সংযুক্ত ১৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার। দেশের ভেতরে ৪২ হাজার ৬১৪ কোটি টাকার অস্থাবর সম্পত্তি জব্দ অবস্থায় রয়েছে। বিদেশে জব্দ হয়েছে ২ কোটি ডলার।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারে আমাদের অগ্রগতি, যেসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছি এবং আইনি বাধা দূর করতে সম্ভাব্য কৌশল নিয়ে আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করেছি। আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনতে চার-পাঁচ বছর লেগে যাবে। তবে এক বছরের মধ্যে বিদেশে থাকা সম্পদ জব্দ করা যাবে। প্রথমে আইনের প্রক্রিয়াটা আমাদের দেশে সম্পন্ন করতে হবে, তারপর সঠিক প্রণালীতে বিদেশে রিকুয়েস্ট করতে হবে। যেটাকে বলা হয় মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্টেন্স (এমএলএ)। আমরা এখন এই প্রক্রিয়াতে আছি। আমরা রিকোয়েস্ট পাঠাচ্ছি।
গভর্নর বলেন, আমরা ইতিমধ্যেই তদন্ত বা মামলার আওতাধীন ব্যক্তিদের বিভিন্ন ব্যাংকে জমা থাকা বিপুল পরিমাণ অর্থ জব্দ করেছি। এছাড়া যারা পালিয়ে গেছেন বা অভিযোগের মুখোমুখি হচ্ছেন, তাদের মালিকানাধীন শেয়ারের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছি। আইনের মাধ্যমে জব্দ হওয়া সম্পদ প্রস্তাবিত ফান্ডে স্থানান্তর করা হবে। কোনো প্রকার আইনের ব্যত্যয় হবে না। ফান্ডের টাকা দিয়ে ব্যাংকের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। কারণ ব্যাংকগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের টাকাই লুট করা হয়। বাকি টাকা, যেগুলো ব্যাংক সম্পৃক্ত নয়, তা দিয়ে জনকল্যাণমুখী কাজে ব্যয় করা হবে। এ সরকারের সময়ের মধ্যেই তা বাস্তবায়ন হবে।
ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ইসলামী ব্যাংক সবচেয়ে বড় ব্যাংক। ব্যাংকটিতে এস আলম গ্রুপের ১২ থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকার শেয়ার জব্দ আছে। এই শেয়ার একটি স্ট্রাটেজিক বিনিয়োগকারীর কাছে হস্তান্তর করা হবে। জব্দের অর্থ আমানতকারীদের ফেরত দেওয়া হবে।
পাচারকারী শান্তিতে আছে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে গভর্নর বলেন, তারা শান্তিতে আছে তা আমি মনে করি না। কারণ তারা বড় বড় আইনজীবী নিয়োগ দিচ্ছে। এস আলম ৩০ মিলিয়ন বার্ষিক খরচ হবে এমন আইনজীবী নিয়োগ করছে। এখন থেকে তারা শান্তিতে থাকতে পারবে না। কারণ আইনি লড়াই শুরু হতে যাচ্ছে।
নগদ প্রসঙ্গে গভর্নর বলেন, নগদের যারা প্রকৃত ব্যবস্থাপনা ও বোর্ড ছিল, তারা দুর্নীতির মাধ্যমে টাকা আতসাৎ করেছে। যার পরিমাণ ৬৫০ কোটি টাকা। ই-মানি সৃষ্টি করে এই টাকা আতসাৎ করা হয়, যার আওতায় প্রকৃত অর্থ ছিল না। সরকারের দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচির আওতায় যেসব টাকা ট্রান্সফার করা হতো, সেগুলো নগদের মাধ্যমে করা হতো। সেখানে তারা প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার ওপরে আত্মসাৎ করেছে। এটা আমাদের বাংলাদেশ ব্যাংকের অডিটেও ধরা পড়েছে এবং আমরা যে ইন্টারন্যাশনাল অডিট ফার্ম দিয়ে অডিট করেছিলাম, সেখানেও ধরা পড়েছে। আমরা মনে করি, তাদের হাতে কোনো মতেই নগদের কার্যক্রম যাওয়া উচিত নয়। যেহেতু কোর্টের সিদ্ধান্ত হয়েছে, তার বিরুদ্ধে আমরা আপিল করেছি। আমরা মনে করি, আমাদের পক্ষে রায় পাবো।
নগদ নিয়ে শঙ্কিত জানিয়ে আহসান এইচ মনসুর বলেন, নগদে তারা পুরো নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে। এ সময়ের মধ্যে তারা অনেক কিছু করে ফেলতে পারে, যেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো হাত থাকবে না, আইনের কারণে। তবে বড় কোনো ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। কারণ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে ব্যাংকগুলোকে বলে দেওয়া হয়েছে বড় লেনদেন না করার জন্য। তারা শুধু ক্যাশ ইন ও ক্যাশ আউট করতে পারবে। আমাদের দিক থেকে সেইফ গার্ড নিয়ে নিয়েছি। তবে তারা যেসব অপকর্ম করেছে, তা মুছে ফেলতে পারে, তা নিয়ে শঙ্কিত।
ফজর | ০৪:৫৪-০৬:০৮ মিনিট ভোর |
---|---|
যোহর | ১২:০৯-০৪:২৫ মিনিট দুপুর |
আছর | ০৪:২৬-০৬:০৬ মিনিট বিকাল |
মাগরিব | ০৬:১০-০৭:২১ মিনিট সন্ধ্যা |
এশা | ০৭:২২-০৮:৪৯ মিনিট রাত |
জুম্মা | ১.৩০ মিনিট দুপুর |