| ০৭ জুন ২০২৫

বথুয়ায় আপ্লুত ড. ইউনূস: ‘আঁর লাই দোয়া রাইখ্যো’

রিপোর্টারের নামঃ ডেস্ক নিউজ
  • আপডেট টাইম : 14-05-2025 ইং
  • 27554 বার পঠিত
বথুয়ায় আপ্লুত ড. ইউনূস: ‘আঁর লাই দোয়া রাইখ্যো’
ছবির ক্যাপশন: বথুয়ায় আপ্লুত ড. ইউনূস: ‘আঁর লাই দোয়া রাইখ্যো’

ডেস্ক নিউজ: 


দেড় যুগ পর নিজ পিতৃভূমে গিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠান শেষে হাটহাজারীর বাথুয়া গ্রামে গেলে মুহাম্মদ ইউনূসকে উষ্ণ অভ্যর্থনায় গ্রহণ করেন এলাকাবাসী। নিজ ভিটে ঘুরে উত্তরসূরিদের কবর জিয়ারতের পর গেলেন গ্রামের ছোট্ট মাঠে। যেখানে তার জন্য অপেক্ষায় সহস্রাধিক মানুষ। বাথুয়া গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যেও এদিন আনন্দ উচ্ছ্বাস দেখা যায়। কারণ এ গ্রামের নাম বিশ্বদরবারে পরিচয় করিয়েছেন ড. ইউনূস। উপস্থিত এলাকাবাসীর উদ্দেশ্যে এদিন আঞ্চলিক ভাষায় বক্তব্য রাখেন সরকারপ্রধান। বলেন, ভালা অইলো বেগ্‌গুনের লগে দেয়া অইলো। আইজ্জা আসছিলাম যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন সভা আছে। আশা করি ভবিষ্যতে আরও আসা-যাওয়া অইবো। আঁর লাই দোয়া রাইখোন বেগ্‌গুনে। 

গতকাল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ও সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ সময় ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং বিশ্বব্যাপী শান্তি প্রতিষ্ঠায় ‘অনন্য অবদানের’ জন্য তাকে সম্মানসূচক ‘ডি.লিট’ ডিগ্রি দেয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. ইয়াহ্‌ইয়া আখতার তার হাতে ডি.লিট ডিগ্রির সনদ তুলে দেন। এরপর শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন প্রধান উপদেষ্টা। যেখানে তিনি শিক্ষার্থীদের নতুন বিশ্ব গড়ার স্বপ্ন দেখার আহ্বান জানান। বলেন, সেই নতুন বিশ্ব গড়ার সক্ষমতা আমাদের আছে, যেটা আমরা গড়তে চাই। তিনি বলেন, বর্তমানে যে সভ্যতা গড়ে উঠেছে, তা ‘ধ্বংসাত্মক অর্থনীতির’ সভ্যতা। আমরা যে অর্থনীতি দাঁড় করিয়েছি, তা মানুষকেন্দ্রিক নয়, ব্যবসাকেন্দ্রিক। এই ব্যবসাকেন্দ্রিক সভ্যতা আত্মঘাতী এবং এটা টিকবে না। অনুষ্ঠানে নিজের অতীত স্মৃতি স্মরণ করে ইউনূস বলেন, ১৯৭২ সালে আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেই। দীর্ঘদিন পর এখানে এসে আনন্দিত।

চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষের কথা তুলে ধরে ড. ইউনূস বলেন, ’৭৪ সালে বিরাট দুর্ভিক্ষ হলো। সব কিছু ওলটপালট হয়ে গেল। মনের মধ্যে বহু জিজ্ঞাসার সৃষ্টি হলো। মনে মনে ভাবলাম, পুরো বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ ঠেকানোর ক্ষমতা তো আমার নাই, আমি চেষ্টা করতে পারি, এই বাংলাদেশের একটি ক্ষুদ্র অংশের, কয়েকটি পরিবারের যদি দুর্ভিক্ষ ঠেকাতে পারি, তাহলে সেটা আমার জন্য তৃপ্তির বিষয় হবে যে, আমি একটা কিছু করেছি। নারীদের ঋণদানের বিষয়ে তিনি বলেন, এগুলোর পর যে কাজটা শুরু করলাম, সেটা মহিলাদের খুব পছন্দ হলো। মহিলাদের হাতে ঋণ দিলাম, ৫, ১০, ২০ টাকা। এটাতেই তারা যে এত খুশি হতে পারে জানা ছিল না, কোনোদিন ভাবিওনি। আমি যে একেবারেই টাকা দিয়েছি তাও না, তাদের বললাম আমার টাকা কাজ করে, রোজগার করে ফেরত দিতে হবে। তাতেও তারা খুশি। সভা-সমিতিতে বললাম, লেখালেখিতে বললাম- ঋণ মানুষের মানবিক অধিকার। মানুষ হাসাহাসি করলো। আপনি ঋণের কথা বলেন, অধিকারের কথাও বলেন- এটা কী ধরনের কথা! অর্থনীতিতে তো অধিকারের বিষয় নেই। অনেক খটকা, তা-ও আবার মানবিক অধিকার, একটা খটকার পর আরেকটা খটকা। তিনি আরও বলেন, আশা করি এই বিশ্ববিদ্যালয় যেন সবসময় এটা স্মরণ রেখে তার পাঠদান, গবেষণা কর্মসূচি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য চালু রাখে। আমরা শুধু খণ্ডিত বিষয়ে গবেষণা করার জন্য নিয়োজিত নই, আমাদের প্রত্যেকটি গবেষণার পেছনে একটিই উদ্দেশ্য, তা হলো সমস্ত বিশ্ব আমাদের মনের মতো করে সাজাতে হবে। আমাদের যদি সেই লক্ষ্য না থাকে তাহলে এগুলো গন্তব্যবিহীন শিক্ষাতে পরিণত হবে। পৃথিবীর ভবিষ্যৎ আমাদের হাতে, আমরা কী ধরনের বিশ্ব, সমাজব্যবস্থা এবং শিক্ষাব্যবস্থা চাই সেটাই মুখ্য। তিনি বলেন, ঋণ মানুষের মানবিক অধিকার। আগামীর অর্থনীতির ভিত্তি হবে মানুষ। কোনোদিন নোবেল পাবো এটা মনে আসেনি। এই বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে। আমার শুরুটা এখান থেকেই। কোনোদিন নোবেল পাবো- এটা মনে আসেনি। আমি আমার কাজ করে গেছি। 

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
নামাজের সময়সূচী
জাতীয় সঙ্গীত
©সকল কিছুর স্বত্বাধিকারঃ Gen Z Bangladesh Online - জেন জি বাংলাদেশ অনলাইন | আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ