ডেস্ক নিউজ:
কাতারের রাজপরিবারের কাছ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য প্রস্তাবিত উপহারটি যেন আকাশে ভাসমান একটি রাজপ্রাসাদ। প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলারের বিলাসবহুল বোয়িং ৭৪৭ উড়োজাহাজটি ট্রাম্প প্রশাসন গ্রহণ করতে সম্মত হয়েছে বলে জানা গেছে।
বিমানটিতে রয়েছে মাস্টার বেডরুম, অতিথি কক্ষ, দুটি সম্পূর্ণ বাথরুম (শাওয়ারসহ), নয়টি ছোট টয়লেট, পাঁচটি ছোট রান্নাঘর এবং একটি ব্যক্তিগত অফিস। পুরোপুরি সুসজ্জিত এই উড়োজাহাজটি মূলত কাতারের রাজপরিবার ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত হতো।
১০ বছরের পুরোনো হলেও, কাতার সরকারের এই উপহারকে কোনওভাবে পুরোনো বা বাতিল কিছু ভাবার সুযোগ নেই। এটি একটি উড়ন্ত প্রাসাদের মতো।
শিগগিরই এয়ার ফোর্স ওয়ানে পরিণত হতে যাওয়া এই বোয়িং ৭৪৭-৮ বিমানে রয়েছে বিশাল সোফা ও রিক্লাইনার, কাঠের প্যানেলিং এবং ৪০টিরও বেশি টেলিভিশন—যার মধ্যে ১০টি বড় স্ক্রিনের।
এই উড়োজাহাজে প্রায় ৯০ জন যাত্রী ও ১৪ জন ক্রু সদস্য আরামদায়কভাবে ভ্রমণ করতে পারেন। সাধারণ যাত্রীবাহী ৭৪৭ এ যেখানে ৪৬০ জন পর্যন্ত যাত্রী বসতে পারে, সেখানে এই বিমানে স্ট্যান্ডার্ড বিজনেস ক্লাস আসন রয়েছে মাত্র পাঁচ সারি।
বাকি জায়গাজুড়ে রয়েছে পাঁচটি লাউঞ্জ, যা দুই ডেকজুড়ে ছড়ানো। দুই ডেকের মাঝে সংযোগ রয়েছে বিলাসবহুল সিঁড়ি দিয়ে। এর সঙ্গে রয়েছে আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন সুযোগ-সুবিধা—লাইভ টিভি ও রেডিও, ১৩টি ব্লু-রে প্লেয়ার এবং ইন্টারনেট সংযোগ।
ফরাসি অভ্যন্তরীণ সজ্জা প্রতিষ্ঠান 'আলবার্তো পিন্টো ক্যাবিনেট'-এর ডিজাইনে তৈরি এই বিমানের প্রতিটি কক্ষেই রয়েছে নরম কার্পেট, চামড়ার সোফা ও সোনালি ফিনিশিং। কনফারেন্স রুমে রয়েছে আরামদায়ক ট্যান ও ক্রিম রঙের চেয়ার, যেগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সামঞ্জস্য করা যায়। বিমানের করিডোরজুড়ে রয়েছে প্রতিফলিত সোনালি রঙের দেয়াল, যা অনেকটা নিউইয়র্কের ট্রাম্প টাওয়ারের সজ্জার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।
বিমানটি হস্তান্তরের পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগ এটিকে প্রেসিডেন্সিয়াল ব্যবহারের জন্য ব্যাপকভাবে রূপান্তর করবে। এই কাজের দায়িত্ব পেয়েছে প্রতিরক্ষা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এল-থ্রি হ্যারিস, যারা নিরাপত্তা ও যোগাযোগব্যবস্থা সংযোজন করবে।
বোয়িং-এর নতুন প্রেসিডেন্সিয়াল প্লেন তৈরি বিলম্বিত হওয়ায়, ট্রাম্প সাময়িকভাবে এই কাতারি বোয়িং ৭৪৭-৮ ব্যবহারের ঘোষণা দিয়েছেন ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে। নতুন বোয়িং তৈরি হওয়ার কথা ছিল ২০২৪ সালে, কিন্তু এখন তা পিছিয়ে ২০২৭ পর্যন্ত গড়াতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
বোয়িং-এর এই প্রকল্প শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালে, ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে। দুইটি অত্যাধুনিক প্রেসিডেন্সিয়াল প্লেন তৈরির জন্য ৩ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি হয়। কিন্তু সরবরাহ ও প্রকৌশলগত জটিলতায় এই প্রকল্প দেরিতে যাচ্ছে এবং খরচ বেড়েছে বহু বিলিয়ন ডলার।
বোয়িং সিইও কেলি অর্টবার্গ ১৮ এপ্রিল হোয়াইট হাউসে গেলেও ট্রাম্পের অসন্তোষ প্রশমিত হয়নি। শেষ পর্যন্ত ট্রাম্প বিকল্প হিসেবে কাতারের ৪০০ মিলিয়ন ডলারের উপহারটিকে বেছে নেন, যাতে জরুরি অবস্থায় প্রেসিডেন্ট ও তার দল আকাশেই এটিকে মোবাইল কমান্ড সেন্টার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। এই বিমানে এমন প্রযুক্তি যুক্ত করা হবে, যা পারমাণবিক বিস্ফোরণের আঘাত থেকেও সুরক্ষা দেবে।
এমএএসি অ্যারোস্পেস নামে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান বিমানটিকে বিলাসবহুল প্রাসাদে রূপান্তরের কাজ করেছিল। প্রায় দুই বছর ধরে এই কাজ শেষে ২০২০ সালে এটি বিক্রির জন্য তালিকাভুক্ত করা হয়।
বর্তমান এয়ার ফোর্স ওয়ান-এর তুলনায় এই ৭৪৭-৮ আরও দ্রুত ও দূরপাল্লার। এটি ৭,৭৩০ মাইল পর্যন্ত উড়তে পারে এবং সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ৬৬০ মাইল। যেখানে বর্তমান প্রেসিডেন্সিয়াল প্লেনের গতি ৬৪৪ মাইল এবং পরিসীমা ৬,৮০০ নটিক্যাল মাইল।
ট্রাম্প এই বিশালাকৃতির নতুন প্লেন ব্যবহার শুরু করলে, এটি হবে এয়ার ফোর্স ওয়ান হিসেবে ব্যবহৃত সবচেয়ে দীর্ঘ যাত্রীবাহী বিমান—দৈর্ঘ্যে ২৫০ ফুট। বর্তমান প্রেসিডেন্সিয়াল প্লেন ব্যবহৃত হয়ে আসছে ১৯৯০ সাল থেকে, জর্জ এইচ.ডব্লিউ. বুশের সময়কাল থেকে।
ফজর | ০৪:৫৪-০৬:০৮ মিনিট ভোর |
---|---|
যোহর | ১২:০৯-০৪:২৫ মিনিট দুপুর |
আছর | ০৪:২৬-০৬:০৬ মিনিট বিকাল |
মাগরিব | ০৬:১০-০৭:২১ মিনিট সন্ধ্যা |
এশা | ০৭:২২-০৮:৪৯ মিনিট রাত |
জুম্মা | ১.৩০ মিনিট দুপুর |