ডেস্ক নিউজ:
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সমাজবিজ্ঞান অনুষদ এলাকায় একটি দেয়ালের সামনে তরুণ-তরুণীর জটলা। সবাই কালো গাউন ও টুপি পরিহিতি। দেয়ালে আঁকা একটি গ্রাফিতি ঘিরে তাদের যত উৎসাহ। ওই গ্রাফিতিতে ফুটে উঠেছে তিন তরুণের মুখ। তারাও গাউন ও টুপি পরা। হাতে সনদ। মাঝখানের তরুণের নাম হৃদয় চন্দ্র তরুয়া। তাঁর ডান পাশে ফরহাদ হোসেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শহীদ তারা। হৃদয়ের ডান পাশে ফাহিম আহমেদ পলাশ। গত বছর নোয়াখালীতে বন্যার্তদের জন্য ত্রাণ নিয়ে যাওয়ার পথে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান তিনি।
গ্রাফিতির তিনজনই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, যেখানে আগামীকাল বুধবার হতে যাচ্ছে পঞ্চম সমাবর্তন। এই সমাবর্তনকে দেশের ইতিহাসে ‘সবচেয়ে বিশাল ও ব্যতিক্রমধর্মী’ বলছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কারণ এতে ২২ হাজার ৫৮৬ জন স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করা শিক্ষার্থী অংশ নেবেন। সমাবর্তন ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে চলছে উৎসবের আমেজ।
এই সমাবর্তনে সহপাঠী-বন্ধুদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার কথা ছিল পরিসংখ্যান বিভাগের ছাত্র ফাহিমের। হৃদয় ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় এবং ফরহাদ দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। সমাবর্তন উপলক্ষে তারাও হয়তো বন্ধুদের সঙ্গে আনন্দ করতেন। বিভাগের প্রাক্তনদের সঙ্গে আড্ডা দিতেন, গল্পে মেতে উঠতেন। এই তিন সাহসী তরুণ আজ নেই। তাই তাদের স্মৃতি ধরে রাখতে আঁকা হয়েছে গ্রাফিতি। এ ছাড়া ক্যাম্পাসে বিভিন্ন স্থানে জুলাই গণঅভ্যুত্থান সম্পর্কিত গ্রাফিতি আঁকা হয়েছে।
সমাবর্তন উপলক্ষে ইতোমধ্যে প্রিয় প্রাঙ্গণে পৌঁছে গেছেন প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। গতকাল সব অনুষদে গাউন ও টুপি বিতরণ করা হয়। পরে ক্যামেরাবন্দি হয়ে প্রিয় প্রাঙ্গণে স্মৃতি ধরে রাখছেন সবাই। তাদের একজন এহসান জাকারিয়া। তিনি যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের শিক্ষার্থী। গতকাল বিকেলে সমাজবিজ্ঞান অনুষদে নিজ বিভাগ থেকে গাউন ও টুপি নিয়ে বের হতেই জাকারিয়ার চোখ আটকে যায় হৃদয়দের নিয়ে আঁকা গ্রাফিতিতে।
জাকারিয়া বলেন, ‘ফাহিম আমার ব্যাচমেট। অসহায় মানুষের জন্য কাজ করতে গিয়ে সে প্রাণ দিয়েছে। বেঁচে থাকলে সেও সমাবর্তনে যোগ দিত। আনন্দ করত। হৃদয় ও ফরহাদ দেশের জন্য শহীদ হয়েছে। তিনজনই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য গর্ব। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে তৈরি করা হয়েছে দেড় লাখ স্কয়ার ফিটের আকর্ষণীয় প্যান্ডেল। প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থী, অতিথি, অভিভাবকসহ প্রায় লাখো মানুষের সমাগম ঘটবে এ মিলনমেলায়। লোগোতেও প্রতিফলিত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবময় ইতিহাস, শহীদ আবু সাঈদের প্রতিকৃতি। এবার ১৮ হাজার শিক্ষার্থী পাচ্ছেন উপাচার্যের সই করা ব্যতিক্রমী সনদ। সমাবর্তনের প্রধান আকর্ষণ এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন তিনি। অনুষ্ঠানে তাঁকে সম্মানসূচক ডি-লিট ডিগ্রি দেওয়া হবে।
উপাচার্য অধ্যাপক ইয়াহ্ইয়া আখতার বলেন, ‘পঞ্চম সমাবর্তন শুধু চবির নয়, দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যতিক্রমধর্মী এবং বিশাল পরিসরের সমাবর্তন। এতে প্রায় এক লাখ মানুষের সমাগম ঘটবে। আমার জানামতে, আর কোনো সমাবর্তনে এত মানুষের সমাগম ঘটেনি।’
সমাবর্তন আয়োজন কমিটির সদস্য সচিব ড. এনায়েত উল্যা পাটোয়ারী বলেন, ‘সমাবর্তনের বাজেট ধরা হয়েছে প্রায় ১৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে অংশগ্রহণকারীদের থেকে প্রায় সাড়ে ছয় কোটি টাকা নেওয়া হয়েছে। সমাবর্তনে ৪২ জনকে পিএইচডি, ৩৩ জনকে এমফিলসহ মোট ২২ হাজার ৫৮৬ শিক্ষার্থীকে ডিগ্রি দেওয়া হবে।’
ফজর | ০৪:৫৪-০৬:০৮ মিনিট ভোর |
---|---|
যোহর | ১২:০৯-০৪:২৫ মিনিট দুপুর |
আছর | ০৪:২৬-০৬:০৬ মিনিট বিকাল |
মাগরিব | ০৬:১০-০৭:২১ মিনিট সন্ধ্যা |
এশা | ০৭:২২-০৮:৪৯ মিনিট রাত |
জুম্মা | ১.৩০ মিনিট দুপুর |