বিশেষ প্রতিনিধি, বিশেষ প্রতিনিধি।।
ডেস্ক নিউজ:
ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে থাকা মিত্রদের নির্বাচনী জোট এবং নির্বাচিত হলে সরকারেও রাখবে বিএনপি। সাম্প্রতিক সময়ে শরিক দলগুলোর সঙ্গে চলমান বৈঠকে বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা জোটের বিভিন্ন দলকে এই বার্তা দিয়েছে বলে জানা গেছে। অবশ্য শরিকদের সঙ্গে আসন বণ্টন নিয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা হয়নি দলটির। নির্বাচনী জোট গঠন কিংবা জোট গঠনের রূপরেখা কেমন হবে, সেটিও এখনো স্পষ্ট করেনি বিএনপি। আগামী জাতীয় নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ ঘোষিত হওয়ার পরই বিষয়টি ক্রমে দৃশ্যমান করবে দলটি। তবে মিত্রদের মধ্যে বিজয়ী হওয়ার মতো নেতাদের আসন ছাড়ার পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির। দলটির দায়িত্বশীল একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আগামী ডিসেম্বর থেকে পরবর্তী জুনের মধ্যে ত্রয়োদশ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বললেও সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ কিংবা দিনক্ষণ এখনো ঘোষণা করেনি। বিএনপি মনে করে, নির্বাচনমুখী প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব। তাই এই দাবি আদায়ে ঐকমত্য তৈরিতে গত ১৯ এপ্রিল থেকে ফ্যাসিবাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের মিত্র এবং নির্বাচন বর্জনকারী যুগপতের বাইরের দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করছে বিএনপি। এই ইস্যুতে ঐকমত্য তৈরির মাধ্যমে সরকারের ওপর পরোক্ষ ও মনস্তাত্ত্বিক চাপ অব্যাহত রাখবে দলটি।
এদিকে রাজনীতি ক্রমেই নির্বাচনমুখী হওয়ায় বিএনপির নির্বাচনী জোট গঠন বা জোটের রূপরেখা কেমন হবে, সেটি নিয়ে আলোচনা চলছে। বিএনপির জোটসঙ্গী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও নিজেদের মতো করে চিন্তাভাবনা করছে। বিএনপি তাদের কত আসন ছাড় দেবে, কে কোথায় নির্বাচন করবেন, তা নিয়ে তারা এক ধরনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। জোটের শরিক দলগুলো এখন বিএনপির কাছ থেকে নির্বাচনী জোট গঠনের খুব স্পষ্ট বার্তা আশা করছে। একই সঙ্গে এটি নিয়ে আলোচনাও শুরু করতে চায় তারা।
বিএনপি সর্বশেষ ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল। দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে থাকায় তখন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে দলটি মূলত নির্বাচন করেছিল। বিএনপি তখন শরিকদের জন্য মোট ৫৯টি আসন ছেড়ে দিয়েছিল। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এবং ২০ দলীয় জোটের হয়ে বিএনপির ধানের শীষ কিংবা নিজেদের দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করেছিল তারা। এরপর ২০২৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি ও মিত্ররা। ছোট-বড় মিলিয়ে তখন ৬২টির মতো রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নেয়নি।
বিএনপির বর্তমান অবস্থান হচ্ছে, আগামী নির্বাচনে বিজয়ী হলে তারা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে থাকা মিত্রদের নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করবে। এখন প্রশ্ন উঠেছে, কাদের নিয়ে নির্বাচনী জোট গঠন করবে বিএনপি। প্রাথমিকভাবে দলটির তরফ থেকে এখন পর্যন্ত নির্বাচনী জোটের রূপরেখা কেমন হবে, সে ব্যাপারে স্পষ্ট কোনো ধারণা দেওয়া হয়নি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটি ও যুগপতের লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, দেশে নির্বাচনী প্রক্রিয়া এখনো শুরু হয়নি। সুতরাং শরিকদের সঙ্গে আসন বণ্টন নিয়েও এখনো আলোচনার অবস্থা আসেনি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অনেক আগেই ঘোষণা দিয়েছেন, নির্বাচনে বিজয়ী হলে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে থাকা সবাইকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করবেন এবং রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১ দফা বাস্তবায়ন করবেন। তিনি আরও বলেন, দল এখনো আসন বণ্টন নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে এটা তো সময়মতো, স্বাভাবিকভাবেই আলোচনায় আসবে।
বিএনপি ২০১৮ সালের নির্বাচনে মিত্রদের ৫৯টি আসন ছেড়ে দিয়েছিল। এর মধ্যে জামায়াতে ইসলামীসহ তৎকালীন ২০ দলীয় জোটকে ৪০টি আর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে ছেড়েছিল ১৯টি আসন। নিবন্ধন না থাকায় তখন বিএনপির প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে ভোট করেছিলেন জামায়াতের প্রার্থীরা। দলটির তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল (বর্তমানে আমির) ডা. শফিকুর রহমান ধানের শীষ প্রতীকে ঢাকা-১৫ আসন থেকে নির্বাচন করেন।
জানা গেছে, বিএনপি আন্দোলনে থাকা মিত্রদের নিয়েই নির্বাচন করবে। সেক্ষেত্রে জোটের যেসব প্রার্থীর সংশ্লিষ্ট এলাকায় বিজয়ী হয়ে আসার মতো সক্ষমতা রয়েছে, আসন বণ্টনের ক্ষেত্রে তাদের প্রাধান্য দেবে, সেসব আসন তারা ছেড়ে দিতে পারে। জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে এবার বিএনপির নির্বাচনী জোট হবে কি না, কিংবা জামায়াত তাদের নির্বাচনী জোটে থাকবে কি না- সে ব্যাপারটি এখনো স্পষ্ট নয়। বিএনপি এবং জামায়াত এবার আলাদাভাবে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে বলে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা রয়েছে।
এদিকে বিএনপির কোনো কোনো নেতা সাম্প্রতিক সময়ে বলেছেন, আগামীতে নির্বাচনী জোট হবে না। এ বিষয়ে গত ২৪ এপ্রিল বিএনপির সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বাম ঐক্যের নেতাদের আশ্বস্ত করে বলা হয়, এটি দলীয় কোনো সিদ্ধান্ত নয়। ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে যারা ছিল, বিএনপি আগামীতে তাদের নিয়ে নির্বাচন করবে এবং তারা সরকারেও থাকবে।