বিশেষ প্রতিনিধি, বিশেষ প্রতিনিধি।।
ট্রাম্প দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্টকে একটি ছবি দেখান, যা তিনি শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের হত্যার প্রমাণ হিসেবে দাবি করেন। দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের গণহত্যার প্রমাণ হিসেবে একটি ছবি উপস্থাপন করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যা আসলে কঙ্গোর গোমা শহরে ধারণ করা রয়টার্সের ভিডিও ফুটেজ থেকে নেয়া হয়। ওই ভিডিওটি কঙ্গোর এম২৩ বিদ্রোহীদের হামলার পর নিহতদের দাফনের দৃশ্য দেখাচ্ছিল।
হোয়াইট হাউসে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার সঙ্গে বৈঠকের সময় ট্রাম্প একটি প্রিন্ট করা ব্লগপোস্ট দেখিয়ে বলেন, ‘এইসবই শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের মরদেহ, যাদের কবর দেয়া হচ্ছে।’ কিন্তু ছবিটি আসলে ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ তারিখে কঙ্গোর গোমায় তোলা হয় এবং রয়টার্স তা নিশ্চিত করেছে। খবর রয়টার্সের।
ব্লগপোস্টটি আমেরিকান থিংকার নামক এক কনজারভেটিভ ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়, যেখানে দক্ষিণ আফ্রিকা ও কঙ্গোর সংঘাত ও বর্ণ বৈষম্য নিয়ে আলোচনা করা হয়। পোস্টটিতে ছবিটি ‘ইউটিউব স্ক্রিনগ্র্যাব’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল, যেখানে রয়টার্সের ভিডিওর লিঙ্কও ছিল।
ওই ছবিতে থাকা ভিডিওটি ধারণ করেন রয়টার্সের ভিডিও সাংবাদিক জাফার আল কাতান্তি। তিনি জানান,সেদিন মিডিয়ার জন্য প্রবেশ কঠিন ছিল। আমাকে এম২৩ বিদ্রোহীদের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করে এবং রেডক্রসের সহায়তায় চিত্র ধারণের অনুমতি নিতে হয়। শুধু রয়টার্সেরই ভিডিও আছে।’
ট্রাম্প যখন হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট রামাফোসাকে ওই ব্লগপোস্ট দেখান, তখন তা দেখে বিস্মিত হন আল কাতান্তি। তিনি বলেন, 'বিশ্বের সামনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আমার তোলা ফুটেজ ব্যবহার করে প্রমাণ করতে চাইলেন যে দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গদের কালো মানুষ হত্যা করছে।’
ট্রাম্প বৈঠকে দক্ষিণ আফ্রিকার ভূমি আইন, পররাষ্ট্রনীতি এবং শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘুদের প্রতি তথাকথিত ‘অবিচার’ নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে আবারও সমালোচনা করেন। তিনি বৈঠক চলাকালে হঠাৎ এক ভিডিও চালান, যেটিকে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের গণহত্যার প্রমাণ হিসেবে দাবি করেন। এই তত্ত্বটি দীর্ঘদিন ধরে ডানপন্থী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে প্রচারিত হয়ে আসছে, যদিও এটি মিথ্যা প্রমাণিত।
ট্রাম্প এরপর একের পর এক প্রিন্ট করা রিপোর্ট তুলে ধরে বলেন, ’মৃত্যু, মৃত্যু, মৃত্যু—ভয়ানক মৃত্যু।’
হোয়াইট হাউস এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। তবে ব্লগপোস্টটির লেখক এবং আমেরিকান থিংকারের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আন্দ্রেয়া উইডবার্গ রয়টার্সকে জানান, ট্রাম্প ভুলবশত ছবিটি চিহ্নিত করেছেন। তিনি আরও বলেন, ’পোস্টটি রামাফোসার ‘বিকৃত বর্ণ-আবিষ্ট মার্ক্সবাদী সরকারের’ শ্বেতাঙ্গ দক্ষিণ আফ্রিকানদের ওপর বাড়তে থাকা চাপের দিকেই ইঙ্গিত করেছিল।’ দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে এবং বলেছে, দেশটিতে বর্ণভিত্তিক নিপীড়নের কোনো প্রমাণ নেই। রামাফোসার এবারের যুক্তরাষ্ট্র সফরের উদ্দেশ্যই ছিল ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন।